স্টাফ রিপোর্টার : প্রকৃতিতে হাজারো ফুলের সমারোহ এখন জানিয়ে দিচ্ছে দুয়ারে ঋতৃরাজ বসন্তের আগমনী বার্ত। আর দুদিন পরেই ঋতুরাজ। একইসঙ্গে ভালোবাসা দিবসও। আনুষ্ঠানিক বসন্তবরণ আর ভালোবাসার দিন ঘিরে তরুন-তরুনীদের মধ্যে আগাম প্রস্তুতি থাকলেও রঙিন ফুলের পশরা সাজিয়ে ক্রেতা সংকটে দিন গুনছেন রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীরা।
ফুল বিক্রির মাধ্যমে অন্যের বসন্ত রঙিন করে তোলেন ফুল বিক্রেতারা। তবে এবছর বসন্তের সেই হাসি মেলতে পারেনি রাজশাহীর ফুল বিক্রেতাদের চোখে-মুখে।
করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে শিক্ষা নগরীর প্রতিষ্ঠানগুলো। শহরে নেই শিক্ষার্থীরাও। থাকবে না বসন্তবরণের আনুষ্ঠানিক তেমন আয়োজন। তাই আশানুরূপ ফুল বিক্রি না হওয়ার শঙ্কায় বসন্তের রঙটাও যেন ফিকে মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
রাজশাহী নগরীর ব্যস্ততম এলাকা সাহেববাজার। বাজারের জিরো পয়েন্ট থেকে আরডি মার্কেট পর্যন্ত রাস্তার ধার ঘেঁষে গড়ে উঠেছে হরেক ফুলের দোকান। সকাল থেকেই এগুলোতে লেগে থাকতো উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু এখন ক্রেতাশূন্য না হলেও বিক্রি কমেছে কয়েক গুণ।
সরকারি-বেসরকারি দফতরের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের বাইরে তেমন কোনো অর্ডার নেই দোকানগুলোতে। সাধারণ ক্রেতাদের উপস্থিতিও নেই বললেই চলে।
সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের চাহিদা থাকে প্রচুর। বিজয় দিবস, থার্টিফার্স্ট নাইট, বসন্তবরণ, ভ্যালেন্টাইনস ডে, শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে ফুলের ব্যবহার বাড়ে ক্রমেই। রাজশাহীতে এসব ফুলের একটা বড় অংশের ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবারের বসন্তবরণ ও ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে ফুল বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন দোকানিরা।
কোভিড-১৯ এর প্রকোপে ফুল বিক্রির ভরা মৌসুমেও আশানুরূপ ফুলের ক্রেতা নেই রাজশাহীতে। টানা ১১ মাসের মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফুল বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে জানান দোকানিরা। তবে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তাতে অল্প দিনের মধ্যেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাজশাহী নগরীর জিরো পয়েন্টে ফুল বিক্রি করছেন মাইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এর আগে এত খারাপ অবস্থা দেখতে হয়নি কোনোদিন। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সব ছাত্রছাত্রী এখনও রাজশাহীতে ফেরেনি। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠানও কমে গেছে’।
বসন্তবরণের দিনে ফুল বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বসন্তবরণ বা ভালোবাসা দিবস, যে দিবসের কথাই বলেন- রাজশাহীতে সব অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে। তারা না থাকলে অনুষ্ঠান হয় কিভাবে? আর অন্য বছরের চেয়ে এবারের শীতে বিয়ের অনুষ্ঠানও কমে গেছে। সব মিলিয়ে খুবই খারাপ অবস্থা যাচ্ছে’।
রাজশাহীর বাজারে বিক্রি হওয়া ফুলগুলোর অধিকাংশ আসে যশোর থেকে। দেশের অন্যান্য স্থানের মত রাজশাহীর ফুলের বাজারে যশোরের গদখালীর ফুলের রয়েছে একক রাজত্ব। এছাড়া নওগাঁ ও রাজশাহীর কয়েকটি উপজেলা থেকেও বেশ কিছু ফুলের আমদানি হয় এই বাজারে।
রাজশাহী নগরীর দোকানগুলোতে সাধারণত গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, জিপসিসহ নানা প্রজাতির ফুল বিক্রি হয়। জাতভেদে একেকটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০-৪০ টাকা দরে। এছাড়াও রজনীগন্ধা ১৫ টাকা, প্রতি ১০০ পিস গাঁদাফুল ৫০-৬০ টাকা, জারবেরা ২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ১০ টাকা, জিপসি ফুল ২০ টাকা, গ্লাডিওলাস ৩০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি হয়।
আকার ও ফুলের জাতভেদে তোড়া বা বুকেটগুলোর দামে রয়েছে ভিন্নতা। সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে এগুলোর দাম শুরু হয়।
ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন রাজশাহীর বাজারে ফুল বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এবছর ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রি এক লাখ টাকা ছাড়াবে না বলে মন্তব্য করেন দোকানিরা।
ফুল বিক্রেতা রাজিব হাসান বলেন, ‘আগে ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হতো। আর এবার বিক্রি পাঁচ-সাত হাজারের উপরে যাচ্ছে না। সরকারি অফিস ছাড়া তেমন কোনো অর্ডারও পাওয়া যাচ্ছে না’। বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলের আমদানি পর্যাপ্ত থাকলেও চাহিদা নেই। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে ফুলের চাহিদা বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরবিসি/১২ ফেব্রুয়ারি/ রোজি