• বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন

৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট, উপস্থাপন বিকেলে

Reporter Name / ১১৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : চলমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব দিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আর চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এবারের বাজেটের স্লোগান ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাস মহামারির এই সংকটকালে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। এজন্য আগামী বাজেটে আটটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে করোনা নিয়ন্ত্রণে অর্থায়ন ও স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রাসরণ করা। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজ সফলভাবে বাস্তবায়ন, নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, অধিক খাদ্য উৎপাদনে কৃষিতে গুরত্ব এবং মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া দেশে উৎপাদিত এবং বেশি ব্যবহার হয় এমন বেশিরভাগ পণ্যের দাম নাগালে রাখতে দেশি শিল্পে ব্যাপকহারে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে কম্পিউটারসহ কিছু পণ্যের উৎপাদন উৎসাহিত করতে সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তবে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে কৃষিযন্ত্র, স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য। এতে ওইসব পণ্যের দাম কমতে পারে। বিড়ি, সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপের ঘোষণা আসছে।

এদিকে নতুন করে কর আরোপ না করায় চাল, ডাল, চিনি, লবণ, দেশে উৎপাদিত পেস্ট, পাউরুটি, সাবান, বোতলজাত পানি, ফলের জুস, মসলা, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে না। কর অব্যাহতি-রেয়াতি সুবিধা এবং আমদানি করা সমজাতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করায় বিদেশি খেলনার দাম বাড়লেও কমবে দেশি খেলনার দাম। আমদানি করা সম্পূর্ণ মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত মোটরসাইকেল কম দামে পাওয়া যাবে।

বাজেটে মোট ব্যয়: আসছে বাজেটে সরকারের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে সরকারের পরিচালন ব্যয় বা অনুন্নয়ন ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। করোনা মহামারির ফলে সরকারের পরিচালন ব্যয় বেড়েছে। চলতি বছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। সে তুলনায় আসছে বছরে পরিচালন ব্যয় বাড়বে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। আর আবর্তক ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ব্যয় ধরা হচ্ছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ধরা হচ্ছে ছয় হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

এডিপি: বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) অনুমোদন করেছে। চলতি বছরের বাজেটে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপির বাস্তবায় হয়েছে ৩৫ শতাংশেরও কম।

বাজেটে আয়: আগামী বাজেটে ব্যয়ের বিপরীতে মোট আয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে আয় বাড়ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। মোট আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরেও এনবিআরকে একই পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া রয়েছে।

প্রথমবারের মতো এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে না। এছাড়া আগামী বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি: বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বাজেটে প্রবৃদ্ধির এই হার ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের মোট জিডিপির আকার ধরা হচ্ছে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এদিকে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। ফলে মানুষের হাতে টাকার সরবরাহও কমেছে। যার যার ফলে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয়ই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আসছে বছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ঘাটতি: উন্নয়নশীল দেশগুলো সাধারণত ঘাটতি বাজেট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশও প্রতি অর্থবছর ঘাটতি বাজেট দেয়। করোনা ভাইরাসের কারণে এই ঘাটতি এবার সব সীমা অতিক্রম করছে। আগামী বাজেটে ঘাটতি ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বাজেটে তা ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ব্যতীত ঘাটতির পরিমাণ সর্বকালের রেকর্ড ভেঙে দেবে। ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। আর জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে পাঁচ হাজার এক কোটি টাকা। বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ: বাজেটে এবারও থাকছে জরিমানা ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। আগামীতে উৎপাদনশীল শিল্প ও আবাসন খাতে কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। ফলে যে কেউ অপ্রদর্শিত আয়ের ঘোষণা দিয়ে যেকোনো অঙ্কের অর্থ বৈধ করতে পারবেন। ‘ভলান্টারি ডিসক্লোর অব ইনকাম’ নামে পরিচিত এই নিয়মটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবর্তন করা হয়। এ সুযোগ নিতে হলে প্রযোজ্য করহার ও তার সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। আসছে বাজেটে এই জরিমানা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব আসতে পারে। ফলে জরিমানা ছাড়াই শুধু ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব থাকতে পারে আসছে বাজেটে।

আসন্ন বাজেট নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বড় বাজেটের প্রয়োজনীয়তা আছে। অনেক দেশই করোনাকালে বাজেট বড় করেছে। সুতরাং এটি কোনো সমস্যা বা বড় বিষয় না। দ্বিতীয় বিষয় হলো বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বেড়েছে। কোভিডের কারণে একদিকে ব্যয় বাড়ছে অন্যদিকে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি হচ্ছে না। এটাও খুব একটা দুশ্চিন্তার বিষয় না। কোভিডের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ তার ব্যাতিক্রম নয়।

তিনি বলেন, কিছু কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সঙ্কা থাকে। সেটাও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা বাস্তবসম্মত না। কারণ অনেক লোকের উপার্জন কমে গেছে, চাকরি হারিয়েছে কাজে সার্বিক চাহিদা কমে গেছে। ফলে বাজেটে ঘাটতি বৃদ্ধি পেলেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে না।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে সমস্যার জায়গা হলো রাজস্ব আদায়। এই ব্যর্থতা মানা যায় না। দক্ষিণ এশিয়ায় তো অবশ্যই, গোটা বিশ্বেই কর জিডিপি হারে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এটা বৃদ্ধি করতে হবে। বাজেটে করের আওতা বাড়াতে হবে, করজাল বিস্তার করতে হবে। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতার বাইরে। সেগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে।

সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, আর বাজেটে শুধু বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে। স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করতে পারছে না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্নীতি রোধ করতে হবে। আমাদের বাজেটের আকার যাই হোক না কেন বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে চিরন্তন একটা ঘাটতি থাকে। এবার যেহেতু আকার বাড়ছে তাই বাস্তবায়নের ঘাটতিও বেড়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অবশ্যই প্রয়োজনীয়। এরজন্য প্রশাসন যন্ত্রের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তাদের জবাব দিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পুরষ্কার ও তিরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে সম্প্রতি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়েই আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হবে। জেনারেলি আমরা বলতে পারি আমাদের লক্ষ্যই থাকবে দেশের মানুষকে বাঁচানো, ব্যবসায়ীদের বাঁচানো। সুতরাং সবার স্বার্থ দেখেই আমরা বাজেটটি করছি। পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষকে সাথে রাখা। তাদেরকে সাথে রেখেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হলে বছরের মাঝামাঝি সময়ে সংশোধন করা হয়।

সংশোধিত বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৩ লাখ এক হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ করা হয়েছে।

আরবিসি/০৩ জুন/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category