• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

করোনা ঝুঁকিতে রাজশাহী, লকডাউনের চিন্তা

Reporter Name / ১২৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৭ মে, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চারজন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রোগির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় তাদের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, মৃতদের মধ্যে চারজনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার। একজন করোনা শনাক্ত ও তিনজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে। এদের মধ্যে দুইজন মারা যান আইসিইউতে বাকি দুইজনের মধ্যে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে একজন ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন করে মারা যান।

ডা. সাইফুল জানান, হাসপাতালের আইসিইউসহ করোনা ওয়ার্ডে মোট ১৭২ জন রোগি ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ জন করোনা শনাক্ত। আর করোনা আক্রান্তদের মধ্যে আইউসিইউতে রয়েছেন মোট ১৪ জন।

এদিকে রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ৫৩৮ জনের মৃত্যু হয়েচে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১২ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮২ জন মারা গেছেন রাজশাহীতে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩২ জন, নওগাঁয় ৩৮ জন, নাটোরে ২১ জন, জয়পুরহাটে ১১ জন, সিরাজগঞ্জে ২৪ জন এবং পাবনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার বিভাগে নতুন ১৪০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে রাজশাহীর দুইটি পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে সামান্য কমেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শনাক্তের হার। বুধবার দিবাগত রাত আটটার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও রামেক হাসপাতালের দুই পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে।
রিপোর্টে দেখা গেছে, রাজশাহী জেলার করোনা শনাক্তের হার আগের দিন বুধবার ছিল ২১.৭ শতাংশ। তবে, বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশে এসেছে। ল্যাব দুইটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

তবে, রাজশাহীর সিভিল সার্জন দাবি করেছেন, জেলার করোনা সংক্রমণ শনাক্তর হার ১৮ শতাংশেরও কম। কারণ পরীক্ষিত ২২০টি নমুনার মধ্যে মাত্র ৩৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, রামেক ল্যাবে ১২৬ ও রামেক হাসপাতাল ল্যাবে ৬৯ জন রাজশাহীর বাসিন্দাদের কাছ থেকে নেয়া মোট ১৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ৮২ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্যে রামেক ল্যাবে ৫৫ জন ও রামেক হাসপাতাল ল্যাবে ২৭ জন। এদিকে, গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের লকডাউনে থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার কমে এসেছে।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন করোনার হটস্পট। সে কারণে সংক্রমণ ঠেকাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলছে এক সপ্তাহের বিশেষ লকডাউন। তবে নানান ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ রাজশাহীতে আসছেন। এরপর তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় সংক্রমণ রোধে রাজশাহীতেও বিশেষ লকডাউন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিমধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সভায় লকডাউনের প্রস্তাব এসেছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ পুলিশ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা অনেকেই লকডাউনের পক্ষে মত দেন বলে জানা গেছে।

সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘ফিডার রোড দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মানুষের রাজশাহী আসা বন্ধ করতে হবে। এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। কারণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মানুষ ভয়ে পালিয়ে রাজশাহী আসছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাশাপাশি রাজশাহীকেও কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা যায়।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, ‘রাজশাহীতে বিশেষ লকডাউন করা হবে কি না সেটি এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে আপাতত স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যেন কোনো মানুষ রাজশাহীতে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়টি কঠোরভাবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে রাজশাহীতেও বিশেষ লকডাউন আসতে পারে।’

রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজশাহী হয়ে বাস, ট্রেন ও মাইক্রোযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী সড়কে পুলিশি পাহারা থাকায় অনেকে গ্রামের ভেতর দিয়ে রাজশাহীতে প্রবেশ করছেন।

আরবিসি/২৭ মে/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category