• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন

রামেক হাসপাতাল পাচ্ছে আরও একটি পিসিআর ল্যাব

Reporter Name / ১০৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার: করোনার নমুনা পরীক্ষার আরও একটি পলিমার চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন নিতে রাজি হয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) কর্তৃপক্ষ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নমুনা পরীক্ষার চাপ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এই মেশিনটি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণ দেখিয়ে প্রথমে রামেক এই মেশিন নিতে রাজি হয়েছিল না।

তবে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ পিসিআরটি নিতে রাজি হয়েছে। এখন কলেজে আরও একটি ল্যাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যে ল্যাব প্রস্তুত হলেই মেশিনটি রাজশাহী আসবে। অত্যাধুনিক এই মেশিনটি একসঙ্গে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে। রামেক প্রথমে মেশিনটি নিতে আগ্রহ না দেখানোর কারণে সেটি খুলনায় দিয়ে দেয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলছিল।

রামেকের ভাইরোলজি বিভাগে এখন দুটি পিসিআর মেশিন চলে। প্রতিটি মেশিনে এক শিফটে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। এখন নমুনার চাপ থাকলে প্রতিদিন প্রতিটি মেশিনে দুই শিফট করে মোট ৩৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রামেক হাসপাতালের ল্যাবেও একটি পিসিআর মেশিনে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন মেশিনটি চালু হলে রাজশাহীতে মোট পিসিআর হবে চারটি।

এদিকে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালেও ‘জিন-এক্সপার্ট’ মেশিনে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে এখানে শুধু সেখানকরার ভর্তি থাকা রোগী, চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রামেক হাসপাতালেও শুধু রোগী ও চিকিৎসক-নার্সদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শুধু রামেকের দুটি পিসিআর ল্যাবেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

এখানে রাজশাহীও ছাড়াও জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁর নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর নমুনার চাপ বেড়ে যাওয়ায় সবগুলো রামেকে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। বাড়তি নমুনা পাঠাতে হচ্ছিল ঢাকা। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে আরেকটি পিসিআর বরাদ্দ দেয়। এছাড়া পাবনা মেডিকেল কলেজ ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজেও (শজিমেক) একটি করে পিসিআর মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে শুধু রামেক এই মেশিন নিতে আগ্রহী ছিল না।
গত ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। সভায় গণপূর্তের পক্ষ থেকে ল্যাব স্থাপনে নিজেদের প্রস্তুতি থাকার কথা জানানো হয়। কিন্তু নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর মেশিনটি দ্রুত স্থাপনে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালককে তাগিদ দেন। শেষ পর্যন্ত রামেক মেশিনটি নিতে রাজি হয়। এরপর গণপূর্ত অধিদপ্তর ল্যাব প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে।

রামেকে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তৃতীয় তলায় পুরনো ল্যাবটির পাশেই দুটি কক্ষ ভেঙে নতুন ল্যাব প্রস্তুতের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। আর চার-পাঁচদিনের মধ্যে কাজ মোটামুটি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর ল্যাব প্রস্তুত হলেই ঢাকা থেকে মেশিনটি পাঠানো হবে। দুটি পিসিআর মেশিন নিয়ে আগের ল্যাবটি পরিচালনা করে রামেকের ভাইরোলজি বিভাগ। নতুন পিসিআর ল্যাবটি থাকবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তত্বাবধানে। নতুন এই ল্যাব পরিচালনার জন্য রামেকেরই ফরেনসিক বিভাগ থেকে কয়েকজন ল্যাব সহকারী নেয়া হচ্ছে।
রামেকের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। আগের ল্যাবটিই করা হয়েছে ফরেনসিক বিভাগের পাঁচটি রুম নিয়ে। চিকিৎসকেরা এখন বসার মতই জায়গা পান না। আরও একটি পিসিআর মেশিন নিয়ে ল্যাব করার মত ভাল জায়গা আমাদের ছিল না। জনবলেরও ঘাটতি আছে। সে কারণেই আমরা প্রথমে এই মেশিন নিতে আগ্রহী ছিলাম না। পরে চিন্তা-ভাবনা করে রাজশাহীর ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ আমরা মেশিনটি নিচ্ছি। এখন ল্যাব প্রস্তুত করার কাজ দ্রুতই এগোচ্ছে।’

তিনি জানান, নতুন ল্যাবটি মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ পরিচালনা করবে। তবে এবারও ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দুটি কক্ষ ভেঙে একটি করা হচ্ছে। নতুন মেশিনটি দুই শিফট পরিচালনা করতে হলে অন্তত ১৪ জন ল্যাব সহকারী দরকার। কিছু জনবলও ফরেনসিক বিভাগ থেকে নেয়া হবে। তবে ল্যাবের জন্য মাইক্রোবায়োলজি বিভাগেরই চিকিৎসক থাকবেন। চিকিৎসকের কোন ঘাটতি নেই। কারা কারা কাজ করবেন তা ঠিক করা হচ্ছে। তবে সবকিছুই চূড়ান্ত হবে মেশিন আসার পর।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজশাহী বিভাগের জন্য পাওয়া নতুন তিনটি পিসিআর মেশিনের মধ্যে পাবনা ও বগুড়ায় স্থাপনে কোন সমস্যা ছিল না। রাজশাহীতেই মেশিনটি বসানো নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। কারণ, এটি রামেক ছাড়া অন্য কোথাও দেয়া যেত না। শেষ পর্যন্ত রামেক মেশিনটি নিচ্ছে। ল্যাব স্থাপনের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। ল্যাব প্রস্তুত হলেই মেশিনটি ঢাকা থেকে চলে আসবে। তখন আরও বেশি সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। কোন নমুনা আর ঢাকায় নিতে হবে না। কারণ, অত্যাধুনিক এই মেশিনটির কার্যক্ষমতা অনেক বেশি। একসঙ্গে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারবে মেশিনটি।

আরবিসি/০৬ মে/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category