• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
কারিতাস আলোকিত শিশু প্রকল্পের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালা রাণা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ রাজশাহীতে খানকাহ শরীফে লুটপাট,ভাংচুর ও হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার-সংকটে ভারতীয় বিদ্যুতের ১০০ কোটির বকেয়া পরিশোধে হিমশিম বাংলাদেশ ছয়দিন পর সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা: বাবা-ছেলেসহ গ্রেফতার ৩ আল্লাহ তোমার বিচার তুমি করো: পরীমণি রাঙ্গামাটিতে ৩ উপদেষ্টা, পরিস্থিতি নিয়ে চলছে বৈঠক ক্যাচ মিসের মহড়া বাংলাদেশের, ৪৩২ রানের লিড নিয়ে বিরতিতে ভারত ৬ ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ভোরে মদিনা-ঢাকা ফ্লাইট বাতিল করল বিমান, আড়াইশ যাত্রীর ভোগান্তি

রাজশাহী অঞ্চলে গাছ থেকে ঝরছে আম-লিচুর গুটি

Reporter Name / ১৩০ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : অব্যাহত তাপ প্রবাহের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে রাজশাহীর আম ও লিচু বাগান। চলমান তীব্র খরা ও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আম ও লিচুর জন্য বৈরি আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। এবারও রাজশাহীর আমগাছে পর্যাপ্ত মুকুল ও গুটি আসলেও তুলনামূলক কম এসেছে লিচু গাছে।

মুকুল আসার পূর্ব থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে তীব্র খরায় ঝরে পড়ছে আম ও লিচুর গুটি। তবে আম ও লিচুর গুটি টিকিয়ে রাখতে পরিচর্যা অব্যাহত রেখেছেন কৃষকরা। রাজশাহীর আম ও লিচু চাষিরা জানান, গছে গুটি টিকিয়ে রাখতে এখনও স্প্রে করা হচ্ছে ছত্রাকনাশক। গাছের গোড়ায় পানি দেয়া হচ্ছে। তবে সেগুলো খুব একটা কাজে আসছে না।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম ব্যবসায়ী ও চাষী জিল্লুর রহমান জানান, এবার গাছে আমের ভালো গুটি আছে। আমরা চাষীরা মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করছি। এখন গুটির পরিচর্যা চলছে। গাছের গুটি কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের বালাইনাশক দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছি। তারপরেও তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় গুটি ঝরে পড়ছে।

একই উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই। গাছের গোড়ার মাটি শুষ্ক থাকলে গুটি ঝরে পড়ে। তাই নিয়মিত সেচ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কারণে প্রচুর আম ঝরে পড়েছিল। তা না হলে গতবারও খুব ভাল লাভ হতো। এবার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাড়তি পরিচর্যা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে, গতবছরের আম্পান ঝড়ে লিচুতে লোকসান গুনতে হয়েছিল চাষিদের। এবার গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। কিন্তু লিচুর দেখা নেই। কিছু গাছে গুটি আসলেও ঝরে পড়ায় চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় বাগানে সেঁচ দিয়েও কাজে আসছে না। ভুক্তভোগী চাষিদের ধারণা, ক্রমাগত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই গাছ থেকে গুটিগুলো ঝরে পড়ছে। লিচুর গুটি ঝরে যাওয়ায় কাঙ্খিত লিচু উৎপাদন ও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

রাজশাহী নগরীর বড় বনগ্রাম চকপাড়া গ্রামের লিচুচাষি সাহাবির রহমান বলেন, আমার ৪টি বাগান ইজারা নেওয়া আছে। গত বছরে ভুল কীটনাশক দিয়ে লিচুর বেশ ক্ষতি হয়েছিল। এছাড়া লিচু গাছে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বোম্বাই ও দেশী জাতের মোট ২০ বিঘা লিচুর বাগান আছে তার। ৯ বিঘায় ৮১টি গাছের মধ্যে হাতেগোনা ৪-৫টি গাছে লিচু এসেছে। সেগুলোও আবহাওয়ার কারণে ঝরে যাচ্ছে। এবার লাখ-দেড়েক টাকা লোকসান হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মাঝারি গাছে ফসফেট, পটাশ, জিঙ্ক, বোরণ, জিপসাম মিলিয়ে ৫ কেজি করে সার দিতে হয়। লিচু সংগ্রহের পরই গাছ ভালো রাখতে যত্ন নেয়া শুরু হয়। চাষ দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। পরিশ্রম করেও এবছর লিচু আসলো না। কিছু করার নাই।

ছোট বনগাম এলাকার লিচুচাষি হান্নান বলেন, গত বছরে প্রতিটি গাছে গোড়া থেকে গাছের আগা পর্যন্ত লিচু এসেছিল, এবার বাগান ফাঁকা। বিভিন্ন জায়গায় লিচুর বাগানে তুলনামূলক কম লিচু এসেছে। সপ্তাহখানেক আগেও গাছের গুটি কম ঝরছিল। তাপমাত্রা যতই বাড়ছে ততই গুটি ঝরছে।

জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর এলাকার চাষী শামীম রেজা বলেন, যে পরিমাণ গুটি আছে তা গতবারের চেয়ে কম। আবহাওয়া তেমন ভালো না, বৃষ্টিপাত নাই। সামনে আবার কালবৈশাখী ঝড় আছে। ঝড়ের পর আসলে বোঝা যাবে কি হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে বেশি চাষ হয় আম। কিছু কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষ হচ্ছে। গত বছর জেলায় আমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে। এবছর ৩৭৩ হেক্টর বেড়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন।
অপরদিকে জেলায় লিচু চাষ হয়েছে ৫১৯ হেক্টর জমিতে। এ থেকে মোট লিচু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৬ মেট্রিকটন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. আউয়াল বলেন, দীর্ঘ ৫ মাস ধরে এ অঞ্চলে বৃষ্টি নাই। মাটিতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। তাপমাত্রা প্রায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। অতিরিক্ত খরার কারণে আম-লিচুর গুটি ঝরে যেতে পারে। বাগানের মাটি শুকিয়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জেলার আম-লিচু চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে বৃষ্টি হলেও গুটি ঝরে যায়। আবার সেঁচ দিলেও গুটি ঝরে যেতে পারে। এক্ষেত্রে চাষিদের করণীয় হলো, থেমে থেমে সেঁচ দেওয়া। মাটিতে হারানো জো-ফিরিয়ে আনতে অল্প-অল্প করে ২-৩ দিন পর পর কয়েকটা সেঁচ দিতে হবে। মাটিতে জো আসলেই গুটি ঝরা রোধ হবে।

আরবিসি/০৬ এপ্রিল/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category