স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) প্রিপেইড মিটারের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আহ্বান জানানো হয়েছে। শনিবার বিকালে রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম হাউজিং কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দারা প্রতিবাদ সভা ও সংবাদ সম্মেলন করে এ আহ্বান জানিয়েছেন।
ছোটবনগ্রাম হাউজিং কোয়ার্টার বাইপাস মোড় সংলগ্ন মাঠে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় বাসিন্দা মেহেবুব কবির শৈবাল। তিনি বলেন, নেসকো জনগণের টাকা লুটপাট করার এক ঘৃণ্য চক্রান্তে মেতেছে। জনগণ না খেয়ে হলেও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করে। তারপরও প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেসকোর অসৎ উদ্দেশ্য প্রমাণ করে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রিপেইড মিটারের মূল্য ধরা হয়েছে চার হাজার টাকা। প্রিপেইড মিটার চালু হলে জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে। ইতোমধ্যেই নগরীর বেশকিছু এলাকায় প্রিপেইড মিটার বসিয়ে দেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এসব মিটার দ্রুত সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হয়। এ ব্যাপারে সিটি মেয়র এবং নগরীর ৪০ জন কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে সমাজসেবক হাসান ওয়ারীদ দুলাল বলেন, প্রিপেইড সিস্টেমে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো জনগণের কত টাকা কাটে তা বোঝা যায় না। তেমনি নেসকোর প্রিপেইড মিটারেও বোঝা যাবে না। নেসকো যদি পাঁচ লাখ প্রিপেইড মিটার বসায় এবং সেসব থেকে মাসে এক টাকা করেও অতিরিক্ত কাটে তাহলে জনগণের পাঁচ লাখ টাকা খোয়া যাবে। এই টাকা লুটপাট হবে।
জনগণের টাকায় নেসকো তাদের কর্মর্কর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেবে। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা নেসকোর প্রিপেইড মিটার বর্জন করছি। রাজশাহীবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- পাড়া-মহল্লায় নেসকোর প্রিপেইড মিটার লাগাতে গেলে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আমাদের এলাকায় এলে আমরাও তাদের সামনে দাঁড়িয়ে যাব।
সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল আজিজ। উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি আশরাফ আলী, ছোটবনগ্রাম হাউজিং কোয়ার্টার সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি একেএম রায়হান আলী, সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, সমাজসেবী শাহীনা আক্তার রোজী, সমাজসেবক মো. রোকনুজ্জামান, ডা. শাহীন, আবদুস সামাদ, মীর মাহাদী, শাজাহান আলী, সালমান ওয়ারিদ প্রিন্স, রাকিবুল হাসান প্রমুখ। পরিচালনা করেন সামিজ উদ্দিন হ্যাপী।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলা- রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের প্রায় পাঁচ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নেসকো ৪১৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। গত বছরের অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। এখন আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এছাড়া আগামী জুনে নওগাঁ, জয়পুরহাটসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় ১৫ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য নেসকো ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এ বছর জানুয়ারিতে, নেসকো রাজশাহী বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় ৪ হাজার ২০০ গ্রাহকের বাড়িতে নতুন প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। কিন্তু এই মিটার নিয়ে আপত্তি উঠেছে রাজশাহীতে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, নেসকো এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাড়াহুড়া করছে। গ্রাহকদের মতামত না নিয়েই উপর জোর করে এই মিটার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিতরণ কোম্পানিটি উদাসীন। এ অবস্থায় প্রিপেইড মিটার বসাতে গেলে বেশকিছু জায়গায় কর্মীরা বাধাগ্রস্ত হন। এর ফলে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে নেসকোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে গ্রাহকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সে সভায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন প্রকল্প স্থগিত রাখার দাবি উঠেছে। প্রিপেইড মিটার বসানোর আগে প্রতিটি এলাকায় গণশুনানি করারও দাবি ওঠে। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিদ্যুৎ গ্রাহক, আইনজীবী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা এই দাবি তোলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নেসকোর কর্মকর্তারা বলেছেন, কাউকে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রাহক অসন্তুষ্ট হয় এমন কিছু করা হবে না।
আরবিসি/০৬ ফেব্রুয়ারি/ রোজি