• শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ
রাজশাহীতে ছাড়পত্র চাওয়ায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রাজশাহীতে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে হাতু’ড়িপে’টার অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের ডিডি’র থানায় জিডি রাজশাহীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত তোপের মুখে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের ডিডি রাজশাহীর সারদায় আবারও এএসপি-এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত শেখ হাসিনা বিদায় হলেও দেশে গণতন্ত্র ফেরেনি: আব্দুস সালাম রাবির বধ্যভূমি এলাকায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত ১ আরএমপি’র ৩ থানায় নতুন গাড়ি হস্তান্তর করলেন পুলিশ কমিশনার রাজশাহীতে বহিস্কৃত বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

সেই ভয়াল দিনের ঘটনাক্রম

Reporter Name / ১৯৭ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : একাত্তরের ২৫ মার্চ ছিল বৃহস্পতিবার। লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ২৪তম দিবসটির ভোর থেকেই অসংখ্য মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণ করতে থাকে।

আজকের মিছিলের চরিত্র ভিন্ন। মিছিলকারী সকলের হাতেই ছিল নানারকম দেশি অস্ত্র।

সকাল ১১টায় সেনাবাহিনীর একটা হেলিকপ্টারে মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এবং জেনারেল ওমর রংপুর গেলেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে গণহত্যার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে উর্ধ্বতন সামরিক অফিসারগণ রংপুর ত্যাগ করেন। রংপুর থেকে সোজা রাজশাহী, যশোর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পরিদর্শন শেষে বিকেলে ঢাকা ফেরেন।

সর্বত্র খবর হয়ে যায়, ইয়াহিয়ার প্রধান সাহায্যকারী উপদেষ্টা এম এম আহামদ গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে গোপনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া করাচীর উদ্দেশে যাত্রা করেন। এরপর ইয়াহিয়ার আরেক উপদেষ্টা এ কে ব্রোহীও ঢাকা ত্যাগ করেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি থমথমে রূপ ধারণ করে। নীলনকশা বাস্তবায়নের ভয়াল রাত ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে।

দুপুর ১২টায় দলবলসহ ইয়াহিয়ার ক্যান্টনমেন্টে চলে যাওয়ার খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান, শেখ আব্দুল আজিজ, আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, গাজী গোলাম মোস্তফা, খাজা আহমদ, মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, আব্দুস সামাদ আজাদ, মতিউর রহমান, মশিউর রহমান, আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ স ম আব্দুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখনসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রত্যেককে নিজ নিজ জেলা ও এলাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনার নির্দেশ দেন।

এসময় নেতৃবৃন্দের প্রত্যেকেই নেতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনি আমাদের বিদায় করছেন। কিন্তু আপনি কী করবেন? আপনি কোথায় যাবেন?’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জানি আজই তারা ক্র্যাকডাউন করবে। তবুও আমি এখানেই থাকব। কারণ, ওরা যদি আমাকে না পায়, তাহলে ঢাকা শহরকে ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করবে। আর তাছাড়া আমি নীতিগতভাবে মনে করি, আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নির্বাচিত নেতা আমার পক্ষে পলায়ন করা সম্ভবপর নয়।

একজন বললেন, ‘ওরা তো আপনাকে হত্যা করবে।’ তখন তিনি বলেন, ‘আমাকে হত্যা করে লাভ নাই। ওরা তো বার বার আমাকে কারাগারে নিয়েছে। আমাকে নির্যাতন করেছে। ওদের লাভ হয় নাই। আমাকে হত্যা করেও ওদের লাভ হবে না। কারণ আমার মতো লক্ষ মুজিবের জন্ম হবে বাংলাদেশে।’

সূর্য ডুবলো। পাঁচটা বেজে চুয়াল্লিশ। ঠিক এক মিনিট পরেই ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে জেনারেল ইয়াহিয়া সোজা এয়ারপোর্ট চলে গেলেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বিমান করে করাচি পাড়ি দিলেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ এড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বাঙালী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়ে পালালেন।

কৃষ্ণপক্ষের রাত। সন্ধ্যার পর দু’ঘণ্টাও যায়নি। ক্যান্টনমেন্ট থেকে জিপ, ট্রাক বোঝাই সেনা ট্যাঙ্কসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ছে। তারা ছক অনুযায়ী পজিশন নিচ্ছে। গোলন্দাজ, সাঁজোয়া পদাতিক- তিন বাহিনী থেকে বাছাই করা তিন ব্যাটালিয়ান ঘাতক।

রাত ১০টা ৩৫। নর্থ ঢাকায় সৈন্যরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ঘিরে ফেলেছে। রিসেপসনে কালো বোর্ডে চকখড়ি দিয়ে একজন বাচ্চা ক্যাপ্টেন লিখে দিল- বাইরে বেরুলেই গুলি। বিদেশি সাংবাদিকরা বেরোতে না পেরে রেডিও ধরলেন। কারফিউ-এর কোন ঘোষণা নেই। বাইরে ট্যাঙ্কের শব্দ। ছুটে সবাই ১২ তলায় উঠলেন। মেশিনগানের গুলিতে কানপাতা দায়। ভুট্টোর ঘরের দরজায় গিয়ে সবাই থমকে দাঁড়ালেন। কড়া পাহারা। কাঁচা ঘুমে জাগানো বারণ। ঢাকা-করাচি টেলিপ্রিন্টার লাইনও কেটে দেওয়া হয়েছে। বাইরে পৃথিবী থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেতারের প্রচার। কেউ জানতেই পারেনি ততক্ষণে খুলে গেছে নরকের দরজা।

রাত ১২টায় মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণের মধ্য দিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শুরু করল ইতিহাসের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড। শুরু হলো বাঙালী নিধনযজ্ঞ তথা গণহত্যা। চারদিকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ।

২৫ মার্চ মধ্য রাতে শহরের রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাত, খেলার মাঠ, ক্যাম্পাস সর্বত্রই মৃত্যু আর মৃত্যু। মানুষের কান্না ভারি হয়ে এলো শহরের আকাশ। সে কান্না ছাপিয়ে তখন আকাশে কেবলই মুহুর্মুহু আগুনের লেলিহান শিখা। মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে উঠল লাশের শহর।

একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালী জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের বিভীষিকাময় ভয়াল ও নৃশংসতম বর্বরতা। একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ৫০ হাজারেরও বেশি ঘুমন্ত বাঙালীকে।

আরবিসি/২৫ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category