আরবিসি ডেস্ক : একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে বনদস্যুদের অবাধে গাছ কাটার মহোৎসব। এতে দিনে দিনে কমছে দক্ষিণ উপকূলের সংরক্ষিত বনাঞ্চল।
পরিবেশবাদীদের হিসেব অনুযায়ী, বছরে সুন্দরবনের আদলে সৃষ্ট বরগুনার তালতলীর টেংরাগীরি ও পাথরঘাটার হরিনঘাটা বনাঞ্চলের প্রায় ৮০ হাজার বড় গাছ কেটে নিয়ে যায় বনদস্যুরা। আর নদী ভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ে যে পরিমাণ গাছ নষ্ট হয়- তার হিসেব করাই কঠিন। এতে ক্রমশ কমছে গাছ আর আয়তনে ছোট হচ্ছে বনাঞ্চলগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বন রক্ষা করতে না পারলে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে দক্ষিণাঞ্চল।
বন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬০ সালে ১৩ হাজার ৬৪৭ দশমিক ৩ একর আয়তন নিয়ে টেংরাগিরি বনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। তবে ৬০ বছরের ব্যবধানে বনের আয়তন না বেড়ে সাগর গর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার একরেরও বেশি এলাকা। সাগর গর্ভে চলে গেছে প্রায় তিন লক্ষাধিক গাছ।
টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, বনের ভিতর থেকে বড় বড় সুন্দরি, কেওড়া, গেওয়া গাছসহ নানান প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে বনদস্যুরা। বনের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশের তীব্র ভাঙনে অনেক গাছ পড়ে আছে। বনটি সংরক্ষিত হওয়ার কারণে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ হলেও বনের মধ্যে অবাধে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।
টেংরাগিরি এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বাদল, একই এলাকার জেলে ফারুক, সোবাহানসহ স্থানীয়রা বলেন, প্রতিনিয়িত বনের মধ্যে গাছ কাটে দস্যুরা। বন বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নেয়না।
স্থানীয় বাসিন্দা, তাজুল চৌকিদার, হাইরাজ মাঝি বলেন, ঘূর্ণিঝড় থেকে এই বনাঞ্চল রক্ষা করে আমাদের। দিনের পর দিন এসব বন ছোটো হয়ে আসছে। ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ বলেন, একদিকে সাগরের তীব্র ভাঙন আর অন্যদিকে বনদস্যুদের অবাধে গাছ কাটার কারণে উপকূলীয় এলাকার বনের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। আর এ দায় বন বিভাগের এড়ানোর সুযোগ নেই। বছরে এসব বন থেকে প্রায় ৮০ হাজার গাছ কেটে নিয়ে যায় দস্যুরা।
উপকূলীয় এলাকার সংরক্ষিত বন রক্ষা কমিটির সভাপতি হাছান ঝন্টু বলেন, বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বনদস্যুদের কাছে বনের গাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন স্বল্প মূল্যে। যার একাধিক প্রমাণ রয়েছে সাধারণ জনগণের কাছেও। এমনকি সংরক্ষিত বনের গাছ বিক্রি করার সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কয়েকজন বনরক্ষীও।
এ বিষয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ শাহ আলম বলেন, সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সমুদ্রের পানির সঙ্গে পলিমাটি যুক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে বনের মধ্যে। তাই ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের শ্বাসমূল দীর্ঘ সময় ঢেকে থাকার কারণে অনেক গাছ মারা যাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চরম মূল্য দিতে হবে। যা পরিবেশের জন্য খুবই ভয়াবহ হবে।
বন বিভাগ বরগুনা সদর রেঞ্জের কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় নতুন করে বনায়ন করে শেল্টার বেল্ট তৈরি করে ভাঙন রোধ করা হবে। এছাড়া নতুন করে কিছু চরাঞ্চলে বনায়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উপকূল রক্ষায় নতুন কৌশলের কথাও ভাবছেন তারা।
আরবিসি/২১ মার্চ/রোজি