আরবিসি ডেস্ক: দিনের শুরুতে যেভাবে হাসান মাহমুদ চেপে ধরেছিলেন ভারতীয ব্যাটারদের, তাতে মনে হয়েছিলো ২০০ রান করতেই নাভিঃশ্বাস উঠে যাবে স্বাগতিকদের। দলটার নাম ভারত। টেস্ট ক্রিকেটে অন্যতম শীর্ষ দল। তারওপর নিজেদের মাঠে খেলা তাদের।
সুতরাং, দিনের শুরুতে হাসান মাহমুদ স্বস্তি এনে দিলেও দিনের শেষে বাংলাদেশকে অস্বস্তি উপহার দিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবিন্দ্র জাদেজার বিশাল জুটি। ১৯৫ রানের বিশাল জুটি গড়ে দিনশেষে অবিচ্ছিন্ন তারা। সে সঙ্গে স্বাগতিকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে তারা ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানের বড় স্কোর নিয়ে। খেলেছে ৮০ ওভার। ১০ ওভার বাকি থাকতে দিনের খেলা শেষ হয়।
অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রোহিত-কোহলি-শুভমান গিলরা যেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন, সেখানে রবিচন্দ্রন অশ্বিস দিলেন দৃঢ়তার পরিচয়। ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ১০২ রানে অপরাজিত থেকেছেন।
সেঞ্চুরির পথে হাঁটছেন রবিন্দ্র জাদেজাও। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর জুটি বাধেন জাদেজা আর অশ্বিন। ১১৭ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন এই দু’জন।
দিনের শুরুতে হাসান মাহমুদের আগুনে বোলিংয়ের সঙ্গে নাহিদ রানা এবং মেহেদী মিরাজও জ্বলে উঠেছিলেন। ফলে দ্রুত ৬ উইকেট হারিয়ে বসে ভারতীয়রা। কিন্তু শুরুতে রান তোলার গতি কম থাকলেও শেষ দিকে এসে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে রান তুলেছেন অশ্বিন এবং জাদেজা।
তৃতীয় সেশনেই সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিলেন অশ্বিন এবং জাদেজা। এই সেশনে তারা ১৬৩ রান তোলেন। দিনের খেলা ১০ ওভার কম হয়েছে। না হয় শেষ সেশনে ভারতের রান ৪০০’ও পার হয়ে যেতে পারতো।
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মেঘাচ্ছন্ন সকালে শুরুটা বেশ ভালো করেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। রান তুলতে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটারদের। প্রথম ৪ ওভারে তারা নিতে পারে মোটে ৮ রান।
এর মধ্যে উইকেট পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি সরাসরি প্যাডে আঘাত করে রোহিত শর্মার। বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার।
ক্লোজ কল হওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিভিউয়ে দেখা যায়, স্ট্যাম্পের ওপরের দিকে বল ছুঁয়ে যেতো। কিন্তু আম্পায়ার্স কল হওয়ায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান রোহিত। আম্পায়ার আউট দিলে সেটি আউটই হতো।
তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি রোহিত। হাসান মাহমুদ তার পরের ওভারেই তুলে নিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়কের উইকেট। তার সুইংয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত হন রোহিত। ১৯ বলে করেন ৬ রান।
এরপর শুভমান গিলকেও শূন্য রানে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ। তার লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে বল জমা করেন গিল।
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ বিরাট কোহলিও দাঁড়াতে পারেননি হাসানের সামনে। দুর্দান্ত আউটসুইংয়ে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৬ রান করেই। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত, সবগুলো উইকেটই হাসানের।
প্রথম সেশনে প্রথম ঘণ্টাটা ছিল পুরোপুরি বাংলাদেশের। পেসার হাসান মাহমুদের তোপে রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভারত। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জশস্বি জয়সওয়াল আর রিশাভ পান্ত।
ভারত ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ৬২ রান। ২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৮ রান নিয়ে প্রথম দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। লাঞ্চের পরপরই আঘাত হানেন সেই হাসান মাহমুদ।
বলটি অবশ্য ওয়াইড ছিল অনেকটাই। দেরিতে শট খেলেন পান্ত। বল ব্যাটে ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। ৩৯ রানে সাজঘরের পথ ধরেন পান্ত, হতাশায় নিজের প্যাডেই ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন। ৯৬ রানে ভারত হারায় ৪ উইকেট।
গতিতে ব্যাটারদের ভড়কে দেওয়ার সামর্থ্যে বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে নাহিদ রানা এখন সবার ওপরে। এবার নাহিদের গতিতে পরাস্ত হলেন অনেকটা সময় একপ্রান্ত ধরে রেখে হাফসেঞ্চুরি হাঁকানো জশস্বি জয়সওয়াল।
নাহিদের ১৪৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতির বল বুঝতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন জয়সওয়াল। প্রথম স্লিপে ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। ১১৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৫৬ করে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় ওপেনার।
এর পরের ওভারে লোকেশ রাহুল (৫২ বলে ১৬) পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে। শর্ট লেগে দারুণ এক নিচু ক্যাচ নিয়েছেন জাকির হাসান। ৫ বলের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ফের ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারায় ভারত।