আরবিসি ডেস্ক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বহরের সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ফেরিতে ওঠায় দুই যাত্রীকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে মেয়রের প্রটোকলে থাকা সদস্যদের বিরুদ্ধে। শনিবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
ওই দুই যাত্রী হলেন ঢাকার সুপার এক্সপার্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান নূহ আলম রাজীব (৩৮) এবং একই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রাশেদ ভুইয়া (৩৫)। তারা দুজনই বরিশাল থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন। এদিকে, মারধরের শিকার তাদের কান্নাকাটির একটি ভিডিও গতকাল রবিবার (১৪ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
বাংলাবাজার ঘাট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টির কারণে গত শনিবার বিকেলে এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল ফেরি চলাচল। এসময় ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ঘাটে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। এর মধ্যে দুটি প্রাইভেটকার নিয়ে এক নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কে পারপারের অপেক্ষায় ছিলেন নূহ আলম রাজীব।
ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বহর বাংলাবাজার ঘাটে আসে। তার বহরের দু’টি যাত্রীবাহী বাস ও কমপক্ষে ৩৫টি গাড়ি ছিল। এসব গাড়ি ওঠার জন্য দুটি ফেরি আগে থেকেই অপেক্ষা করে বাংলাবাজার ঘাটে। মেয়র তাপসের বহরের সঙ্গে ফেরিতে ওঠে রাজীবের সঙ্গে থাকা দু’টি প্রাইভেটকার। তার গাড়ি দু’টি ফেরিতে ওঠার পরপরেই মেয়র তাপসের প্রটোকলে থাকা কয়েকজন তাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বললে রাজীবের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
একপর্যায় মেয়রের প্রটোকলে থাকা সদস্যরা তাদের হাতের ওয়ারলেস দিয়ে বেদম মারধর করে রাজীবকে। রাজীবকে বাঁচাতে তার সহকারী রাশেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে ফেরি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় রাজীব ও তার সহযোগী রাশেদকে উদ্ধার করে শিবচর উপজেলার পাঁচ্চর এলাকার ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ১১টার দিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারা ঢাকায় চলে যায়। বেদম মারধরে দু’জনের মাথায় ও চোখে জখম হয়েছে বলে জানায় চিকিৎসক।
মারধরে আহত নূহ আলম রাজীব বলেন, ‘ঘাটের পুলিশ মেয়রের বহরে ফেরিতে উঠতে বলায় আমরা ফেরিতে উঠি। ওঠার পরেই মেয়রের প্রটোকলে থাকা ওয়ারলেস ও পিস্তলধারী কয়েকজন আমাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বলে। আমরা তাদের অনুরোধ জানালে তারা চড়াও হয়ে আমাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। ওয়ারলেস দিয়ে মাথায় যেভাবে মারছে একটা মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিআইপি বলে তারা যা খুশি করবে এটা হতে পারে না। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের যে লাঞ্ছনা করা হয়েছে, যেভাবে মারা হয়েছে আমরা তার বিচার চাই।’
আহত রাশেদ ভুইয়া বলেন, ‘কোনো কথাবার্তা ছাড়াই তারা ৮ থেকে ১০ জন লোক ওয়ারলেস দিয়ে আমাদের মারধর করে। ফেরিতে থাকা পুলিশ তাদের থামতে বললেও তারা থামে নাই।’
জানতে চাইলে বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, ‘ঘাটে ফেরি কিছু সময় বন্ধ থাকায় অনেক যানজট ছিল। এর মধ্যে মেয়রের বহর আসে। বহরে থাকা গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠার পরে দুই যাত্রীকে মারধরের কথা শুনেছি। তবে আমাদের কাছে কেউ আগে বা পরে কোনো অভিযোগ করেনি। তাই বিষয়টি আমরা সেভাবে জানিও না।’
আরবিসি/১৫ মার্চ/ রোজি