আরবিসি ডেস্ক: ১৪ দলীয় জোট, মহাজোট এবং নির্বাচনী মিত্রদের সঙ্গে আসন বণ্টনে এবার সতর্কতার সঙ্গে হিসাবনিকাশ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার পাশাপাশি কোনো আসন ছাড়া হলে সেখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে কী ধরনের কৌশল নেওয়া হলে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো যাবে, তা-ও হিসাবে রাখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল রোববারের মধ্যে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। এরপর শুরু হবে শরিকদের মধ্যে আসন বণ্টনের আনুষ্ঠানিক আলোচনা। সমঝোতা হওয়া আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হবে। জোটগত নির্বাচনের বাইরে থাকা বাকি সব আসন সব দলের প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হতে পারে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বিএনপির অংশগ্রহণের কোনো আলামত নেই। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভোটার উপস্থিতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভোটার উপস্থিতির বিকল্প নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারাও বিষয়টি বিবেচনায় রাখছেন। এমন বাস্তবতা হিসাবে রেখেই প্রতিটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার পক্ষে আওয়ামী লীগ।
নেতার বলছেন, আসনপ্রতি জনপ্রিয়তা ও পরিচ্ছন্ন ইমেজ বিবেচনায় প্রার্থী ঠিক করা সম্ভব হলে ভোটার উপস্থিতি আগের তুলনায় অনেক বাড়বে। তাই প্রার্থী ঠিক করার বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পথ চলছে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে যেসব আসন বণ্টন হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। এর বাইরে শরিকদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতাদেরও তালাশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এবারের প্রেক্ষাপটে যেসব রাজনৈতিক দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, তাদের বিষয়টিও ক্ষমতাসীনদের ভাবনায় রয়েছে। সব মিলিয়ে গত তিন মেয়াদের চেয়ে এবার মিত্রদের বেশি আসনে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ।
জোটের প্রার্থী নির্ধারণে জনপ্রিয়তাই মূল মাপকাঠি হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শুক্রবার বলেছেন, ‘শরিক দল হোক, আর যে-ই হোক, আমাদের বিবেচনায় যেটা আসবে, আমি আমার দলে প্রার্থী নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থীকে বাছাই করছি। অন্য দল থেকে এলেও তার জনপ্রিয়তা থাকতে হবে।’
জনগণের কাছে যারা ‘গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে’, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে কাদের বলেন, ‘যাদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তারা ইলেক্টেবল না; উইনেবল না। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্য নাই, তাদের আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি না।’
এরই মধ্যে ১৪ দলের শরিকরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের কথা জানিয়েছে। তেমনি নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সরকারের সঙ্গে আপসরফার পর শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। যদিও জাপার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেবে।
১৪ দলের শরিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন বণ্টন ইস্যুতে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়নি। যে কোনো সময় বৈঠকের ডাক পড়তে পারে। এজন্য দলের পক্ষ থেকে যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে শরিক দলগুলো।
নেতারা বলছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বৈঠকে ১৪ দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমুর কাছে শরিকদের পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা দেওয়া হবে। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ তালিকা হস্তান্তর করবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শরিকদের নিয়ে আরেকটি বৈঠকে আসন বণ্টন চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এমনও হতে পারে, সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করে আসন বণ্টন করতে পারেন।
আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসনের দাবিদার জাতীয় পার্টি। বিএনপি নির্বাচনে আসছে না—এমন ধারণা থেকেই শেষ পর্যন্ত জাপা পৃথকভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। আজ শনিবার দলটির মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হচ্ছে।
জাপার নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, পৃথক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হলেও আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ৪০টির বেশি আসনে ছাড় আশা করছেন বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা। এর বাইরে অন্যান্য আসনে উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশ নিতে চান জাপার প্রার্থীরা। এজন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমঝোতা হতে পারে। বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমঝোতার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছে দলটি। জাপাকে আসন ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে হেভিওয়েট প্রার্থীর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার ১৮১টি আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের অন্যতম মিত্র জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাদবাকি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে দলটি।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু দৈনিক কালবেলাকে জানান, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির পর বাকিগুলোতে জাসদের প্রার্থীরা উন্মুক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’
১৪ দলের আরেক শরিক গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘শরিক হিসেবে কয়টি আসন আমাদের দেওয়া হচ্ছে, এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত হয়নি।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের বৈঠক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমঝোতা শেষে বাদবাকি আসনে আমাদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’
দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ‘আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসন বণ্টন নিশ্চিত হবে। তবে এর বাইরে আমাদের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকেও নির্বাচনে অংশ নেবেন।’
এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় জাতীয় পার্টিসহ জোটের শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও দলের মনোনয়ন বোডের্র সদস্য হিসেবে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল রোববারের পর শরিকসহ মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনের তালিকা পৌঁছানো হতে পারে। তবে আসন বণ্টনের ব্যাপারে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে আশাবাদী শরিক দলের নেতারা।
আরবিসি / ২৫ নভেম্বর/ রোজি