আরবিসি ডেস্ক : পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন, ফিলিপাইনসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও প্রস্তুত করেছে সংস্থাটি।
তবে এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতেও চলছে মামলা এবং সেই মামলার অবস্থা দেখেই জড়িতদের বিরুদ্ধে সিআইডি চার্জশিট দাখিল করবে। সংস্থাটি বলছে, এখনই চার্জশিট দেয়া হলে সেই টাকা ফেরত আনতে সমস্যা হতে পারে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এই অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলার বেশ কয়েকটি জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়। এর মধ্যে দেড় কোটি ডলার ফেরত এলেও বাকি অর্থের কোনো হদিস মেলেনি।
দেশীয় কোনো চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ লোপাট করেছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি-লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪ ধারা, তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৪ ধারায় এবং ৩৭৯ ধারায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি।
এ বিষয়ে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জিসানুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন, ফিলিপাইনসহ অনেক দেশের নাগরিক জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতেও মামলা চলছে। আমরা যদি এখনই এই মামলায় চার্জশিট দাখিল করি তাহলে সেই টাকা ফেরত আনতে সমস্যা হতে পারে। তাই সেই মামলার অগ্রগতি দেখে আমরা চার্জশিট দাখিল করব। আমাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে, বিদেশে যে টাকা চলে গেছে সেই টাকা দেশে ফেরত আনা।’
চুরির সেই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ। ওই মামলায় আরসিবিসি ও ফিলিপাইনের অভিযুক্ত ক্যাসিনোসহ মোট ১৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং তিন চীনা নাগরিককে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার পরই এর বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোর্টের এখতিয়ারবহির্ভূত উল্লেখ করে পাল্টা মামলা করে আরসিবিসিসহ অন্যরা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মামলাটি খারিজের আবেদন জানায় তারা।
গত বছরের ২০ মার্চ আরসিবিসির করা ওই আবেদন খারিজ করে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত। নিউইয়র্কের স্টেট আদালতে মামলাটির কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলায় চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির চার্জশিট দাখিল করা হবে।’
আরবিসি/০৫ ফেব্রুয়ারী/ রোজি