আরবিসি ডেস্ক : চার বছর আগের ঘটনা মনে করিয়ে দেওয়াটা হয়তো প্রাসঙ্গিক হবে না। তবুও টানতে হচ্ছে।
কেননা সেবার রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে অবশ্য সেই দুঃসময়ের পুনরাবৃত্তি করেনি আলবিসেলস্তেরা। অস্ট্রেলিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে পৌঁছে গেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। নিজের ১০০০ তম ম্যাচটি গোলের পাশাপাশি জিতেই স্মরণীয় করে রাখলেন লিওনেল মেসি।
সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে হার দিয়ে আসর শুরুর পর চারপাশে অনেক কথাই হচ্ছিল। টানা ৩৬ অপরাজিত থেকে গায়ে জড়ানো ‘অপ্রতিরোধ্য’ ট্যাগটিও তখন ফিকে হতো শুরু করে। তবে এটা স্রেফ অঘটন ছিল তা পরের দুই ম্যাচেই বুঝিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে অনায়াসেই চলে যায় নকআউট পর্বে। যেখানে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হলেও শক্তিমত্তায় তারা আর্জেন্টিনার ধারে কাছেও নেই। তবে অস্ট্রেলিয়া কোচ গ্রাহাম আর্নল্ড জয়ের ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু মাঠে সেটির প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি তার শিষ্যরা। শেষ দিকে অবশ্য কিছু চমক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়তি তাদের পাশে ছিল না।
আহমাদ আলি বিন স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতে খেলা তেমন একটা জমে উঠেনি। তবে ৩৫ মিনিটে জাদুকরী সেই মুহূর্তের জন্ম দেন মেসি। নিকোলাস ওতামেন্দির পাস থেকে দারুণভাবে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। প্রথমে অবশ্য ফ্রি-কিক নিয়েছিলেন। কিন্তু তা প্রতিরোধ করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু আর্জেন্টিনা বলের দখল নিতে সময় নেয়নি। মাক আলিস্তার বল বাড়িয়ে দেন ওতামেন্দিকে। প্রথম স্পর্শেই সেটা মেসিকে বাড়িয়ে দেন তিনি। নিচু কর্নার দিয়ে বলকে জায়গামতো পৌঁছে দেন আলবিসেলেস্তে ফরোয়ার্ড।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবমিলিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে এটি নবম গোল মেসির। ছাড়িয়ে গেছেন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনাকে। ১০ গোল নিয়ে তার সামনে আছেন কেবল গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা। তবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এবারই প্রথম গোল করলেন এই ফরোয়ার্ড। চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় গোল।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে সেই ধার ধরে রাখে তারা। চাপে ফেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। যার ফলে দ্বিতীয় গোলটা আসে অস্ট্রেলিয়া গোলরক্ষক ম্যাথিউ রায়ানের ভুলেই। তার কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে দারুণ শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হুলিয়ান আলভারেস। এনিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোল করলেন এই ফরোয়ার্ড।
দুই গোলে পিছিয়ে গিয়ে ব্যাকফুটে থাকা অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ ফিরে ৭৭ মিনিটে। ২৫ গজ দূরে থেকে গুডউইনের নেওয়া শট গায়ে লাগে আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার এনসো ফার্নান্দেসের। তাই দিক পরিবর্তন করে বল সোজা গিয়ে পৌঁছায় জালে। গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস তা ধরার সুযোগও পাননি।
কেননা এক গোল পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় সকারুদের। ৮২ মিনিটে দুর্দান্ত দৌড়ে তিনজনকে কাটিয়ে পেনাল্টি বক্সে চলে যান বেহিচ। কিন্তু লিসান্দ্রো মার্তিনেসের বাধা পেরোতে পারেননি তিনি। তাই এ যাত্রায় বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। যোগ করা সময়ের শেষ দিকে ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠেন এমিলিয়ানো। পেনাল্টি বক্সের ভেতর কুয়োলের শট তিনি দারুণ দক্ষতায় না ঠেকালে এতোক্ষণে খেলা গড়াত অতিরিক্ত সময়ে। কিন্তু কেঁদেই মাঠ ছাড়তে হলো অস্ট্রেলিয়াকে। অন্যদিকে কোয়ার্টারে পৌঁছানোর উৎসবে মেতেছিলেন মেসিরা। শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।
আরবিসি/০৪ ডিসেম্বর/ রোজি