• বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

করোনার মতো আরেক ভাইরাসের সন্ধান চীনে

Reporter Name / ১১৩ Time View
Update : শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২

আরবিসি ডেস্ক : চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে বাদুড়ের শরীরে কোভিড-১৯ এর মতো নতুন একটি ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন এই ভাইরাসটির মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে সংক্রমণ ঘটানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

ইউনানে পাওয়া নতুন এই ভাইরাস বিটিএসওয়াই২ নামে পরিচিত, যা বিশ্বজুড়ে কোভিড মহামারি ডেকে আনা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আর এই ভাইরাসের উত্থানের বিশেষ ঝুঁকি আছে।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, নতুন ভাইরাসটি ইউনান প্রদেশে বাদুড়ের শরীরে পাওয়া পাঁচটি ‘উদ্বেগজনক ভাইরাসের’ একটি; যা মানুষ অথবা গবাদিপশুর জন্য সংক্রামক হতে পারে।

ভাইরাসটির ঝুঁকির ব্যাপারে চীন এবং অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী সম্ভাব্য নতুন ‘জুনোটিক’ রোগ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমে ক্ষতিকারক জীবাণুর মানুষের মাঝে ছড়িয়ে অসুস্থতা তৈরিকে ‘জুনোটিক’ বলা হয়।

শেনজেনের সান ইয়াৎ-সেন বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনান ইনস্টিটিউট অব এন্ডেমিক ডিজিজ কন্ট্রোল এবং সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ইউনানে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

নতুন গবেষণায় এই ভাইরাসের ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ প্রিপ্রিন্ট পেপারে প্রকাশ করেছেন তারা। তবে এই গবেষণাটি এখনও জীববিজ্ঞানবিষয়ক ওপেন অ্যাকসেস ওয়েবসাইট বায়ো-আর্কাইভের সার্ভারে পিয়ার-রিভিউ করা বাকি রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, আমরা পাঁচটি ভাইরাসের প্রজাতি শনাক্ত করেছি, যেগুলো মানুষ অথবা গবাদি পশুর জন্য সংক্রামক হতে পারে। আর এসবের মাঝে সার্স করোনাভাইরাসের মতো একটি নতুন ভাইরাসও রয়েছে। যার সাথে সার্স-কোভ-২ এবং ৫০ সার্স-কোভ ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ এই দুটি ভাইরাসের জেনেটিক উপাদানও নতুন ভাইরাসটিতে পাওয়া গেছে।

তারা বলেছেন, গবেষণায় বাদুড়ের শরীরে পাওয়া ভাইরাসের আন্তঃপ্রজাতি সংক্রমণ এবং সহ-সংক্রমণের সাধারণ ঘটনার পাশাপাশি ভাইরাসের উত্থান ও এর প্রভাব সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণার জন্য ইউনান প্রদেশের ছয়টি কাউন্টি বা শহরের ১৫টি প্রজাতির প্রতিনিধিত্বকারী ১৪৯টি ভিন্ন ভিন্ন বাদুড়ের মলদ্বারের নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। প্রত্যেকটি বাদুড়ের জীবন্ত কোষের নিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ পৃথক করা হয়। একই সঙ্গে তারা এর জিনোম সিকোয়েন্সিংও করেছেন।

তবে এই গবেষণার সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, গবেষকরা একই সময়ে একটি বাদুড়ের শরীরে একাধিক ভাইরাসের উচ্চমাত্রার সংক্রমণের ঘটনাও শনাক্ত করেছেন। ব্রিটেনের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক জোনাথন বলের মতে, এর ফলে বিদ্যমান ভাইরাসগুলো তাদের জেনেটিক কোড অদলবদল এবং নতুন নতুন জীবাণু তৈরি করতে পারে।

অধ্যাপক বল বলেছেন, বিটিএসওয়াই২ ভাইরাসের একটি ‘রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইনও’ রয়েছে; যা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের মতোই। আর এই ভাইরাস যে মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে, ডোমেইনটি সেই ইঙ্গিতও দেয়। রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেন স্পাইক প্রোটিনের একটি মূল অংশ যা মানবদেহে ভাইরাসের জীবাণুর প্রবেশ ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়।

গবেষকরা বলেছেন, কোষে প্রবেশের জন্য মানুষের এসিই২ রিসেপ্টর ব্যবহারে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে বিটিএসওয়াই২ ভাইরাস। এসিই২ মানবদেহের কোষের একটি রিসেপ্টর; যা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসকে শরীরে প্রবেশ এবং সংক্রমণ ঘটানোর অনুমতি দেয়।

চীনের দক্ষিণপশ্চিমের ইউনান প্রদেশ বিভিন্ন ধরনের বাদুড়ের প্রজাতি ও বাদুড়বাহিত ভাইরাসের ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এর আগে এই প্রদেশে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের নিকটাত্মীয় যেমন— বাদুড়বাহিত আরএটিজি১৩১৩ এবং আরপিওয়াইএন০৬১৪-সহ কয়েকটি সংক্রামক ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে। তবে গবেষক দলটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে কোনও ধরনের মন্তব্য করেনি।

আরবিসি/২৬ নভেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category