আরবিসি ডেস্ক : বাংলাদেশে ৬৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ তরুণীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। গণপরিবহনে যৌন হয়রানির শিকার হন ৪৫ দশমিক ২৭ শতাংশ তরুণী। ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ তরুণী গণপরিবহন হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত বাস বা বাসস্ট্যান্ডে যৌন হয়রানির মতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। রেল বা রেল স্টেশনে ৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ তরুণী বিভিন্ন জায়গায় ইভটিজিংয়ের শিকার হন।
‘তরুণীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরে গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশন।
আগামী ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে জরিপটি চালানো হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ১ হাজার ১৪ জন শিক্ষিত তরুণীদের ওপর এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণীদের মধ্যে অবিবাহিত ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ ও বিবাহিত ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বাকিরা আর সংসার করছেন না। সম্প্রতি নারীরা কতটা বৈষম্য, লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানি, সমাজ ও পরিবারে প্রতিবন্ধকতা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়ের শিকার হয়েছেন ও এসব বিষয় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছে, তা নিয়ে জরিপে তথ্য নেওয়া হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্য মতে, জড়িপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ২৯.৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। যৌন হয়রানির মধ্যে আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হন ৬৪ দশমিক ৯২ শতাংশ তরুণী। এমনকি ২০ দশমিক ০৪ শতাংশ তরুণী কুদৃষ্টি এবং অনুসরণের শিকার হয়েছেন।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, তরুণীরা সবচেয়ে বেশি এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হন একাকী চলার সময়ে, যা ৭৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ মা, বোন, বান্ধবী বা অন্য নারী সঙ্গী থাকা অবস্থায় এবং ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বাবা, স্বামী, ভাই বা অন্য পুরুষ সঙ্গী থাকা অবস্থায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৪৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ তরুণী অনলাইনে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে অবান্তর ও কুরুচিপূর্ণ মেসেজ পাঠিয়ে এবং মন্তব্য করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা হয়েছে ৬১ দশমিক ১২ শতাংশকে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল ছবি নিয়ে দুর্ভোগ পোহান বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ অযাচিত আইডি স্টাকিংয়ের শিকার হন।
আঁচল ফাউন্ডেশনের দেওয়া তথ্যানুসারে, ৩৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ তরুণী শৈশবে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। তার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের দ্বারা ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ যৌন নিগ্রহমূলক আচরণের শিকার হন। শৈশবে অপরিচিত ব্যক্তিবর্গের দ্বারা ভুক্তভুগী হন ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়াও ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এহেন হীন আচরণের শিকার হন। শৈশবের এরূপ ঘটনা ২৮দশমিক ৪৩ শতাংশের মনে সবার প্রতি অবিশ্বাসের জন্ম দেয় এবং ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশের ভেতর পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাবের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ একা থাকতে ভয় পান। ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ নারী উল্লিখিত সব ধরনের ট্রমার ভেতর দিয়ে গেছেন।
আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক, ড. কাবেরী গায়েন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীন মোল্লা, সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সুরঞ্জনা সাহা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, মিডিয়া কম্যুনিকেশনের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।
আরবিসি/০৫ মার্চ/ রোজি