• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন

বরেন্দ্রের মাঠে মাঠে আলু তোলার উৎসব

Reporter Name / ১৭৭ Time View
Update : রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাকালীন বছরে দেশে আলুর চাহিদা বেড়ে ছিল দিগুণ। তাই আলু দামও বেড়ে গিয়েছিল আকাশ ছোঁয়া। গতবছর আলুর ভাল দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। তাই চলতি বছর একটু অগ্রিম আলু চাষে নেমে পড়েছিলেন কৃষকেরা। এখন চলছে ক্ষেত থেকে আলু তোলা ভরা মৌসুম।

বরেন্দ্রে আলু মাঠে কেউ মাটি খুড়ছে, কেউ কুড়াচ্ছে। ঠেসে ঠেসে বস্তা ভরছে কেউ কেউ। কোথাও আবার ডিজিটাল মিটারে চলছে ওজন। ক্ষেতের মাঝেই ভর্তি হচ্ছে টলি-লরি, ট্রাক। ক্ষেতের মধ্যে আলু তোলার এমন সব দৃশ্য এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠ জুড়ে। বস্তার সাড়ি শ্রমিকদের পদচারণাই যেন চলছে আলু তোলার মহা উৎসব। এসব দৃশ্য রাস্তায় চলাচলরত পথচারিদের নজর কাড়ছে। চলছে আলুর তোলার ভরা মৌসুম। রাজশাহীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের উপজেলার ক্ষেতগুলোতে এখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ কৃষি শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

আলু চাষীরা জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আলু বড় ও ওজন বৃদ্ধি হওয়াই ফলন বেড়ে গেছে। বাজারে বর্তমাণে দামও ভাল আছে। ফলে চলতি বছর আলু চাষীরা খুশি আছে। সে সাথে ফলন ভাল হওয়ায় অতিরিক্ত আলু হিমাগারে জায়গার অভাবে সংরক্ষণ করা নিয়েও চিন্তিত রয়েছে কৃষকেরা মধ্যে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চলতি ২০২০-২১ কৃষিবর্ষে আলুচাষ হয়েছে ৬৫ হাজার ২৩ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে রাজশাহীতে গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়ে এবার চাষ হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও চাষ হচ্ছে নওগাঁয় ২৪ হাজার হেক্টর, নাটোরে ৮৩৭ হেক্টর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের আলু চাষী আব্দুল লুৎফর রহমান জানান, চলতি বছর ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষাবাদ করেছেন তিনি। অন্য সব বছরের চেয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ বস্তা করে বেশি ফলন হয়েছে। বাজারে কাচা আলু দামও ভাল আছে। হিমাগারে আলু না রেখে এখনি বিক্রি করলেই প্রতি বিঘাতে ১৫ থেকে ২০ হাজার করে লাভ পাওয়াপ যাবে।
একই উপজেলার সাহাপুর নুনাপুকুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, প্রতি বিঘায় আলু উৎপাদন হয় প্রায় ৪ টন। চলতি বছর বেড়ে ৫ টনে পর্যন্ত অনেক চাষীর আলু উৎপাদন হচ্ছে। এ কারণে বছর হিমাগে আলু সংরক্ষণ করার জায়গা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছেন এ অঞ্চলের আলু চাষীরা

আলু চাষীরা জানান, কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আলুচাষের অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাছাড়া উন্নত মানের আলুবীজ ব্যবহার করছেন চাষিরা। আর এতেই বাম্পার ফলন মিলছে। তবে প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণের অভাবে আলুর নায্য দাম পাচ্ছেননা চাষিরা। তাছাড়া আলু রপ্তানীর উদ্যোগ নিলেও লোকসান কমতো কৃষকের।

রাজশাহী জেলা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি আবু বাক্কার আলী জানিয়েছেন, মোট উৎপাদিত আলুর প্রায় ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ হয় হিমাগারে। জেলায় ২৮টি হিমাগারের প্রত্যেকটিতে গড়ে ১৫ হাজার টন করে প্রায় সোয়া ৪ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা যায় । দেড়শ থেকে ২০০ টাকায় প্রতিবস্তা (৫৫ কেজি) আলু সংরক্ষণ করেন চাষি। গত ডিসেম্বরেই পুরনো আলু হিমাগার থেকে চলে গেছে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামিউল ইসলাম বলেন,এই অঞ্চলের মাটি আলু চাষের উপযোগী।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আধুনিক চাষের কলাকৌশল নিয়ে কৃষকদের পাশে রয়েছেন সবসময়। এবারে আবহাওয়া অনুকুল ও রোগ বালাই না থাকায় ফলন ভাল পাচ্ছেন চাষিরা। বাজারে দামও ভাল আছে। তিনি আরো বলেন, এবারে আলু চাষ করে চাষিরা লাভবান হবেন। তাছাড়া আলু তোলার পর বোরো ও ভুট্টা চাষে খরচ কমে আসে। ফলে দিন দিন এ অঞ্চলে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে আলু চাষ। রাজশাহী অঞ্চলে গত বছর বেশ কয়েকটি হিমাগার বেড়েছে। চাষীদের আলু সংরক্ষণ নিয়ে কোন অসুবিধা হবে না বলে মনে করে এ কর্মকর্তা।

আরবিসি/২৮ ফেব্রুয়ারি/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category