• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ

চলনবিল থেকে দুহাজার টন মধু আহরণের সম্ভাবনা

Reporter Name / ১৪৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১

চলনবিল প্রতিনিধি: বিখ্যাত কবি নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য তার কাজের লোক কবিতায় লিখেছেন ‘মৌমাছি, মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।’

নবকৃষ্ণ ভট্রাচার্য অনেক বছর পূর্বে তার কবিতায় যে চরণ গুলো লিখেছিলেন চলনবিল এলাকার বর্তমান প্রেক্ষাপটে মিলছে তার সত্যতা। চলনবিল এলাকায় বন না থাকলেও আছে বিস্তীর্ণ সরিষা খেত। প্রতিবছর অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে চলনবিলের মাঠ গুলোতে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখা যায়। দেখে মনে হয় মাঠ গুলোতে যেন হলুদ গালিচা বিছানো। এমন দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারীরা চলনবিলের সরিষা খেতে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে আসেন। চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে প্রায় ৮শ খামারী চলনবিল এলাকার সরিষা খেতে মৌবক্স স্থাপন করেছেন।

হলুদ ফুলে-ফুলে, নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারীদের পালন করা মৌমাছি। তাই এক সময়ের মৎস খ্যাত চলনবিল এখন মধুর বিলে পরিণত হয়েছে। মৌচাষীরা ধারণা করছেন এবার চলনবিল এলাকার সরিষা খেত থেকে আনুমানিক প্রায় ২০০০ (দুই হাজার) মেট্রিক টন মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে যার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

জানা গেছে, প্রতি বছর অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর, তাড়াশ, সিংড়া, শাজাদপুর, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়ার পশ্চিমাংশসহ এর আশপাশ এলাকার মাঠগুলো ছেয়ে যায় হলুদ সরিষা ফুলে। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে এ বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে এসব জমিতে বোরো চাষ করেন তারা।

অগ্রহায়ন মাস থেকে পাবনা, নাটোর সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌখামারীরা মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকার মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। খামারের মৌবক্স গুলো তারা সরিষা খেতের পাশে স্থাপন করেন এবং কয়েক দিন পর পর মধু সংগ্রহ করেন।

সাতক্ষিরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের মৌখামারী ইমদাদ হোসেন সরিষার মধু সংগ্রহে এসেছেন চলনবিলে। চলনবিলের চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা খেতের পাশে গত ২৮ নভেম্বর তিনি তার ১৮০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। ইমদাদ হোসেন জানান, মৌমাছি এখন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বক্সে রক্ষিত সাঁচে জমা করছে।

চলতি ডিসেম্বর মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মধু সংগ্রহ শুরু করতে পারবেন তিনি। এর পর থেকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার করে মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রায় দুই মাস চলনবিলে মধু সংগ্রহ করবেন তিনি। এ দুই মাসে ছয় থেকে সাত বার মধু সংগ্রহ করতে পারবেন। এক এক বারে ৮ থেকে ১০ মন মধু পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই মাসে ৬০ থেকে ৭০ মন মধু পেতে পারেন তিনি। বর্তমান প্রতি মন মধুর পাইকারী দাম সাত হাজার টাকা। প্রতি বছর এ এলাকা থকে পাইকাররা মধু কিনে বিভিন্ন কোম্পানীতে সরবরাহ করেন। চলনবিলে প্রায় এক হাজার মৌচাষী মধু সংগ্রহে আসেন। খামার গুলোতে প্রায় তিন থেকে চার হাজার শ্রমিকের কর্ম সংস্থান হয়। ২০২০ সালে খামারীরা মধুর ভালো দাম পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।

উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রায় আটশত খামারী চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। কয়েক দিনের মধ্যে আরো দুই থেকে তিনশো খামারী এ এলাকায় মধু সংগ্রহে আসবেন। প্রায় সারা দেশের মৌচাষীরা চলনবিলে মধু সংগ্রহে আসেন। খামারীদের মৌবাক্স স্থাপন করতে আমরা এলাকা ভাগ করে দেই। এক জন খামারী এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকায় মধু সংগ্রহ করেন।

ধারণা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় আনুমানিক প্রায় ২০০০ মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে; যার বাজার মূল্য প্রায় সাঁইত্রিশ কোটি টাকা।

আরবিসি/২৮ ডিসেম্বর/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category