স্টাফ রিপোর্টার : দল-মত নির্বিশেষে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে নাটোরের নারোদ নদী দখল ও দূষণ মুক্ত করতে সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘নারোদ নদী দখল-দূষণ মুক্তকরণে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক সমন্বয় সভায় এই কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী নগরীর একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের কনফারেন্স কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এ সভার আয়োজন করে। সভায় নারোদের দুষনে ক্ষতিগ্রস্থ অধিবাসিরা অংশগ্রহণ করেন।
বক্তারা বলেন, নারোদ নদীকে কেন্দ্র করেই নাটোরের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। নদী পথে মালামাল আনা নেওয়া হতো। নদীর মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন স্থানীয় জনগোষ্ঠী। নাটোর সদর থেকে গুরুদাসপুর পর্যন্ত প্রবাহিত পথে নাটোর শহরের মধ্যে নদীটির প্রায় ৬ কিলোমিটার অংশ পড়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। কিন্তু অবাধ দখল-দূষণের ফলে একদিকে যেমন নারোদ নদীর প্রবাহ কমে গেছে, অন্যদিকে কল-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলায় পানি দূষিত হওয়াসহ অসহনীয় গন্ধে শহরের বাতাস প্রতিনিয়ত ভারী হচ্ছে। মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ছে। এছাড়াও নানারকম চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নদী পাড়ের মানুষ। এতে নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা এবং ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক জীবন।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, নারোদ নদী দূষণ-দখল থেকে মুক্ত করাসহ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবিতে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট মামলা (রিট নং ৭৩২/২০১৪) দায়ের করে বেলা। রিটের শুনানি শেষে আদালত নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করে এমন সব স্থাপনা অপসারণ এবং নদীতে বর্জ্য নিস্কাশন ও পানি দূষণের সব ধরণের দূষনের উৎস হতে নদীকে রক্ষা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি আদালত রুল জারি করেন। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট মাসে নারোদ নদী পরিদর্শনে দেখা যায়, নদীর ওপর নির্মিত ৩৭টি স্থাপনার মধ্যে মাত্র একটি স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। অন্য নির্দেশনা উপেক্ষিতই রয়েছেন সাত বছর ধরে।
বর্জ্য নারোদ নদীতে ফেলা থেকে বিরত থাকতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন দূষণ রোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নদীর ওপর নির্মিত সকল স্থাপনা অপসারণ এবং দখল-দূষণমুক্ত করাসহ নদীটির প্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করে একে রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, হাইকোর্টের একটি রায়ে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু মানুষ নিজেই এই সম্পর্কটি নষ্ট করেছে। অথচ মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে নারোদ নদীটি মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে। এই নদীকে রক্ষা করার সময় এসেছে। আশপাশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে নারোদ নদী রক্ষায় সবাইকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যায়ক্রমে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নদীর দূষণ রোধ হবে।
এসময় অন্যদের মধ্যে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট মো. মিজানুর রহমান, স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, এনজিও সাথীর নির্বাহী পরিচালক মো. শিবলী সাদিক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বেলার রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল।
আরবিসি/১১ নভেম্বর/ রোজি