• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন
শীর্ষ সংবাদ

রাবিতে গেছো শামুকের প্রজননে সাফল্য

Reporter Name / ১০৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২১

রাবি প্রতিনিধি : সুশীতল পরিবেশ। গাছের ছায়ার নিচে বাঁশের তৈরি একটি ঘর। ঘরটির চারপাশ নীল রঙের নেট দিয়ে ঘেরা। ঘরটির ভেতরে আছে কদবেল, জামরুল, পেয়ারা, মাল্টা, পাতাবাহার, তুঁত ও কাঁঠালসহ আরও কিছু গাছ। ঘরটির নাম রাখা হয়েছে ‘ব্লিডিং ফার্ম হাউস’। এটিকে সাধারণত মাইক্রো হেবিটেট বলা হয়। ঘরটিতে বিলুপ্তপ্রায় গেছো শামুকের ক্যাপটিভ প্রজনন ঘটানো হচ্ছে। আর প্রজনন ঘটাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেট্রিক এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক ড. এম শারিয়ার শোভন। ইতোমধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে শতভাগ সফলও হয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে অক্ট্রয় মোড় সংলগ্ন এলাকায় গবেষকরর নিজ বাসার পাশে নির্মাণকৃত ফার্ম হাউসটিতে গেছো শামুকগুলোর কেউ বাশের উপরে কেউ গাছে গায়ে কেউ বা গাছের পাতায় বসে আছে। দিনের আলোতে সব শামুকগুলো যেনো নিশ্চল।

এ বিষয়ে গবেষক ড. এম শারিয়ার শোভন জানান, এই গেছো শামুকগুলো এমফিড্রোমাস প্রজাতির। এদের সাধারণত গেছো শামুকের ‘রাজা’ বলা হয়ে থাকে। গেছো শামুক সাধারণত রাতে চলাচল করে। আর দিনের আলোতে লুকিয়ে থাকে। ফলে তারা যে যার মতো করে নিরাপদ জায়গায় অবস্থান করছে।

শামুক নিয়ে গবেষণার শুরুর গল্পে এই গবেষক বলেন, জাপানে শামুকের ফেরোমন নিয়ে গবেষণা করার সময় মূলত দেশীয় শামুক নিয়ে গবেষণার প্রতি আগ্রহ জন্মে এই গবেষকের। জাপানের এক গবেষক তাকে বিলুপ্তপ্রায় গেছো শামুক নিয়ে গবেষণার পরামর্শ দিলে পরে তিনি দেশের বিভিন্নস্থানে এই শামুকের সন্ধান করেন। অবশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনি এই শামুকের সন্ধান পান। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চারটি গেছো শামুক বাসায় নিয়ে এসে ক্যাপটিভ প্রজনন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি।

বর্তমানে গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. এম শারিয়ার শোভন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা প্রকল্পের অর্থায়নে প্রায় ১ বছরের প্রচেষ্ঠা শেষে প্রজনন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন এই গবেষক। ইতোমধ্যে ৪টি প্রাপ্ত বয়স্ক শামুক প্রায় ১২টি বাচ্চা দিয়েছে। জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় তিনি এই গবেষণা করে আসছেন।

ড. শারিয়ার শোভন বলেন, পরিবেশবান্ধব এই গেছো শামুকগুলো ফসলের কোনও ক্ষতি করেনা। অত্যন্ত মূল্যবান এই শামুকগুলো সাধারণত গাছে থাকা বিভিন্ন ধরনের অনুজীব ভক্ষণ করে। গুটি কয়েক দেশে থাকা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এই শামুকগুলো দেশের জাতীয় ঐতিহ্যের আওতায় পরে। বিলুপ্তপ্রায় এই গেছো শামুকগুলো সংরক্ষণে দেশের বনাঞ্চল সংরক্ষণ করা দরকার।

সরকারি সহযোগিতা পেলে সামনে বৃহৎ পরিসরে গেছো শামুক নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক এই গবেষক। তিনি বলেন, বনাঞ্চল কেটে বসতবাড়ি বা বিভিন্ন বাগান লাগানোর ফলে এই শামুকগুলো প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে। এই শামুকগুলো সংরক্ষণ করা জরুরী। প্রধানমন্ত্রী চাইলে এসব শামুকের প্রজননের জন্য কিছু কিছু বনাঞ্চল সংরক্ষণ করে টুরিস্ট স্পট গড়ে তুলতে পারেন। এতে একদিকে এই শামুক বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে অন্যদিকে বনাঞ্চল সংরক্ষণ হবে পাশাপাশি দেশও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

আরবিসি/২৬ অক্টোবর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category