• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

শুভ জন্মদিন মুক্তির দূত শেখ হাসিনা

Reporter Name / ১৪৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরবিসি ডেস্ক : পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই ‘জীবন্মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ করে এগিয়ে চলেছেন বিশ্বমানবের মুক্তির সাধনায়। ‘শেখের বেটি’ থেকে জননেত্রী, ক্রমান্বয়ে পরিণত হয়েছেন স্টেটসম্যানে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলী তাঁকে আজ আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তমানবী। আত্মশক্তিসমৃদ্ধ সত্য সাধক। প্রগতি-উন্নয়ন, শান্তি ও সমৃদ্ধির সুনির্মল মোহনা।

ঘাত-প্রতিঘাত, শোক-দুঃখ, ব্যথা-বেদনার পাশাপাশি দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসার ভেতর দিয়ে চুয়াত্তর বছর পেরিয়ে তিনি পা রাখলেন পঁচাত্তর বছরে। পিতার আরাধ্য অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে জাতিকে সমৃদ্ধি ও উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে ৪১ বছর ধরেই করে যাচ্ছেন ক্লান্তিহীন নিরলস প্রচেষ্টা। তিনি নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। তাই তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি আজ অচল। এই সত্যটি এদেশের গণতন্ত্রের শত্রুরাও জানে।

প্রথম হাঁটতে শিখেছেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আঙ্গুল ধরে। প্রথমে সেই বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরে, পরে জাতির জনকের দেখিয়ে দেয়া পথ ধরে তিনি হাঁটছেন। আজও হাঁটছেন। হাঁটতে হাঁটতে পার করে দিয়েছেন ৭৪টি বছর। আর এই চুয়াত্তর বছরের সবটুকু ন্যস্ত করেছেন দেশমাতৃকার জন্য। তিনি আর কেউ নন- তিনি হচ্ছেন দেশের দূরদর্শী, বলিষ্ঠ নেতা, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বাতিঘর, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যার আজ ৭৫তম জন্মদিন, জয়তু বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

রাজনীতি শেখ হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়, জন্মসূত্রে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। শৈশব থেকেই তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী জীবনকে দেখেছেন। এই চুয়াত্তর বছরের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় ধরে স্বাধীনতা-অসাম্প্রদায়িক চেতনার কাণ্ডারি হয়ে নৌকা নামের একটি প্রতীকের হাল ধরে আছেন। সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। জীবনের প্রায় সিকিভাগ পার করে দিয়েছেন সরকারপ্রধান হিসেবে দেশের হাল ধরে। ১৯ বার তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মৃত্যুভয়কে পায়ের ভৃত্য করে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার জন্য। এখন জীবনের একটাই প্রত্যয়- জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া। সে প্রত্যয় নিয়েই এগিয়ে চলছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

পাকিস্তানের জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে, বার বার মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালে অধিকারবঞ্চিত বাঙালীর যেভাবে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের যেখানেই মানুষ তাঁর অধিকারবঞ্চিত হন, নিষ্পেষিত হয় মানুষ আর মানবতা, সেখানেই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাঙালী জনগোষ্ঠীর মনোজগতে এক নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়েছেন শেখ হাসিনা। একুশ শতকের বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন তিনি। বিশ্বও দেখছে মাত্র ১২ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া এক উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে দেশকে অভিশাপমুক্ত করেছেন তিনি। করেছেন যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের ঘৃণ্য ঘাতকদের বিচার। এখন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই শেখ হাসিনা বদলা নিতে চান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার।

জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা, যাঁর একচল্লিশ বছরের (সক্রিয়ভাবে) রাজনৈতিক জীবনজুড়ে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধময় ঝড়ো হাওয়ার মোকাবেলা, ঘাতকের হত্যা চেষ্টা, চক্রান্ত, নির্যাতন, জেল-জুলুম সয়ে যেতে হয়েছে। পুরো জীবনই তাঁর নিবেদিত বাঙালী ও এই বাংলার মানুষের জন্য। আর এজন্য তাঁকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার। পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার পর ঘাতকচক্র তাঁকে বিনাশে কতশত অপচেষ্টা ও চক্রান্তই না চালিয়ে যাচ্ছে আজও। কিন্তু তিনি রয়েছেন এই বাংলার মানুষের অন্তরজুড়ে। নিজের আত্মবিশ্বাস ও বাংলার মানুষের বিশাল সমর্থন নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়ন-অগ্রগতির মহীসোপানে। সাহস তাঁকে দিয়েছে প্রেরণা। জুগিয়েছে অজস্র উদ্দীপনা। নতজানু না হওয়ার মন্ত্র তো তাঁর আজন্ম। আপোসহীন দৃঢ়তায় তিনি সব ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশকে আজ পরিচিত করেছেন ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশবকাল কাটে পিত্রালয়ে। ’৫৪’র নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মার সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন নতুন ভূমিকায়। ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ‘বিশ্ব মানবতার বাতিঘর’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে।

৪০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় শেখ হাসিনা কেবল সেই মহান নেতার (বঙ্গবন্ধু) কন্যা এবং তাঁর রাজনীতির উত্তরসূরি হিসেবে গণমানুষের প্রধান নেতার আসনে স্থান পাননি, তিনি জেল-জুলুম, মামলা-হামলা, হত্যা চেষ্টাসহ হাজারো হুমকির মুখে অটল থেকে নেতৃত্বের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার। সাগর সমান অর্জনে সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতির কর্মময় জীবন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজনৈতিক পথপরিক্রমায় ছাত্রনেত্রী থেকে জননেত্রীতে পরিণত হওয়া শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত হবে অতি সাধারণভাবেই।

প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় কাজে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য জন্মদিনের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই থাকতে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কিন্ত করোনা মহামারীর কারণে গত দেড় বছর যেতে পারেননি। এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন, বর্তমানে অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে। দেশে না থাকলেও বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্মদিন উদযাপনে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে আবেগ, উচ্ছ্বাসের এতটুকু কমতি নেই।

করোনার কারণে বড় ধরনের কোন কর্মসূচী নেয়া না হলেও আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের অজস্র সংগঠন তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করে মিলাদ, দোয়া, প্রার্থনা ছাড়াও নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ সারাদেশে উদযাপন করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর তিন যুগের বেশি সময় ধরে দেশের এই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিয়ে রাজনীতির মূল স্রোতধারার প্রধান নেতা হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বেই তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় প্রধান বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তাঁর নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট এবং পরে মহাঐক্যজোট গড়ে ওঠে। ১৪ দল ও মহাঐক্যজোটের তীব্র আন্দোলনের মুখে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২২ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরী অবস্থা জারি করে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে ওই বছরের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। সংসদ ভবন চত্বরের বিশেষ কারাগারে তাঁকে প্রায় ১১ মাস বন্দী থাকতে হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে এর আগেও কয়েক দফা গৃহবন্দী হয়েছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই দেশে ফিরে আসে পুনরায় গণতন্ত্র, দেশের ইতিহাসে একটানা তৃতীয় মেয়াদসহ চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারী বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে।

এভাবেই শুরু হয় তাঁর শহরবাসের পালা, তাঁর নাগরিক জীবন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটির দারোদ্ঘাটন হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গ মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যন্ত এই বাড়িতেই অবস্থান করেন। ১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশী বাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গবর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। ওই বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কলেজ ছাত্রী সংসদের সহসভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সহজ সারল্যে ভরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন। মেধা-মনন, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। পোশাকে-আশাকে, জীবন-যাত্রায় কোথাও তাঁর বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার কোন ছাপ নেই। নিষ্ঠাবান ধার্মিক তিনি। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরান তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিনের সূচনা ঘটে। পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন কয়েকবার।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬ দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। তাঁর জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশঙ্কা ও দুঃসহ দুঃখ-কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই, কারাবন্দী পিতা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে।

বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকহানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচীতে নিয়ে যায় তখন বঙ্গবন্ধুর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন একটি বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দী থাকাবস্থায় শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তিনি মুক্ত হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাঁর কন্যা সন্তান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জন্ম লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। এসময় বিদেশে থাকায় পরম করুণাময় আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনকিছুই তাঁকে তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র এবং দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখার পাশাপাশি রাষ্ট্র পরিচালনায়ও ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি তাঁর সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তৃতীয় মেয়াদেই ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য পূরণে নিয়োজিত আছে।

দক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় সারাবিশ্বের অনেক সম্মানজনক পদকে ভূষিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর এই কন্যা। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। সমুদ্র জয়ের পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশও জয় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে নাড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বকে, বিশ্ববিবেককে। আজ সারাবিশ্বেই তাঁর নাম আলোচিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মানবতার বিবেক’, ‘মানবতার মা’ হিসেবে।

নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলী তাঁকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। তিনিই বাঙালীর জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক দৈন্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত একটি জাতি ও রাষ্ট্রকে কী প্রাজ্ঞতায় এত উঁচুতে নিয়ে এসেছেন, তাঁর সফল নেতৃত্বেই উন্নয়ন-অগ্রগতির মহীসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অতীত ও বর্তমান তুলনাতেই তা শুধু দেশের মানুষই নয়, বিশ্ব নেতাদের কাছেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। তাই সারাদেশে এখন শুধু একটাই স্লোগান ‘শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’

দুঃখ-সুখে গড়া জীবনে বেড়ে ওঠা তাঁর। বিস্মৃতি স্পর্শ করে না বলে সবকিছু গোছানো। ভাষণে-বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তুলে আনেন সত্য ইতিহাসের সোনালী-রূপালী এবং ট্র্যাজিক ইতিহাস। দেশের সমকালে তিনিই একমাত্র রাজনৈতিক নেত্রী, যাঁকে হারাতে হয়েছে সব। আর তাঁর এই হারানো আসলে পুরো জাতির জন্যই হারানো। বাঙালী জীবনে একমাত্র ট্র্যাজেডি পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের নৃশংসতা। পিতৃহন্তারকরা চেয়েছে তাঁর বিনাশ। স্বয়ং রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকেও তাঁর প্রাণ হরণের চেষ্টা চলেছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে। হত্যার অপচেষ্টা চলে আসছে সেই ’৮১ সাল থেকে দেশে ফেরার পর থেকেই। কিন্তু শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই ‘জীবন্মৃত্যু পায়ের ভৃত্য’ করে এগিয়ে চলেছেন বিশ্বমানবের মুক্তির সাধনায়। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দ্রুতগতিতে।

শুধু রাজনীতিই নয়, শিল্প, সংস্কৃতি ও সাহিত্যঅন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা লেখালেখিও করেন। তাঁর লেখা এবং সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টির বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে- শেখ মুজিব আমার পিতা, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ, আমাদের ছোট রাসেল সোনা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র, সহেনা মানবতার অবমাননা, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি, সবুজ মাঠ পেরিয়ে। জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে আজ প্রার্থনার দু’হাত তুলে দীর্ঘায়ু কামনা করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। পঁচাত্তর বছর বয়সেও তিনি থাকুন সুস্থ, সক্রিয়, প্রাণোচ্ছল এবং কর্মপ্রাণ, থাকুন জাতির আশা-ভরসার স্থল হিসেবে। জয়তু বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা।

কর্মসূচী : কোনদিনই ঘটা করে জন্মদিন উদযাপন পছন্দ করেন না এবং কখনও উদযাপনও করেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু লাখো-কোটি নেতাকর্মী ও সমর্থকের প্রাণের বাতিঘর যে তিনি। তাই করোনা আতঙ্কের মধ্যেই তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আওয়ামী লীগসহ দলটির সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অজস্র সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ উদযাপন করবে বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্মদিন।

নিজ দলের নেতাকর্মী এবং দেশের সর্বস্তরের মানুষ আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা ও দেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা এবং শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাবেন নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে। দিনটি উপলক্ষে সারাদেশে সব মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া আজ কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা), ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি), মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (২৯ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রানীর গির্জা এবং বিকেল ৫টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এসব কর্মসূচীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।

আরবিসি/২৮ সেপ্টেম্বর/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category