• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৭ পূর্বাহ্ন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ উৎপাদন বেড়েছে আমসত্ত্বের

Reporter Name / ১৮৩ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সারাদেশে রঙ্গিন রসাল আমসত্ত্ব সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস। আমের মৌসুমের শেষদিকে এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ আমসত্ত্ব রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যাচ্ছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে আমের উৎপাদন বেশি। অন্যদিকে লকডাউনের প্রভাবে আমের দাম কম হওয়ায় বেড়েছে আমসত্ত্ব তৈরীর পরিমাণও। আর এতে প্রভাব পড়েছে দামে। গতবছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে গ্রামে গ্রামে আমসত্ত্ব কিনছেন পাইকারী ব্যবসায়ীরা।

জেলার পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বেশি আমসত্ত্ব উৎপাদন হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। বানিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে জেলায় এখনও তেমন কোন আমসত্ত্ব তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। তাই পুরোটাই গৃহিণীদের কাছ থেকেই সরবরাহ হয় আমসত্ত্ব। লকডাউনে আমের দাম না থাকায় তা দিয়ে আমসত্ত্ব বানানোর দিকে আগ্রহ বাড়িয়েছেন গৃহিণীরা।

গৃহিণীরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি আমসত্ত্ব তৈরি হয় আশ্বিনা আমের। গতবছর এই জাতের আমের আমসত্ত্ব বিক্রি হয়েছে ৭০-১১০ টাকা কেজি দরে। অথচ চলতি বছরে ৪০-৬০ টাকার মধ্যে রয়েছে আমসত্ত্বের দাম। বাড়ি বাড়ি সংগ্রহ করা পাইকারি ব্যাবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৈৗসুমে অন্তত ৪-৫ গুণ বেশি আমসত্ত্ব তৈরি হয়েছে।

শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়ণপুর গ্রামের সাহারুল ইসলাম। গত ২০ বছর ধরে গৃহিণীদের থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমসত্ত্ব কিনে আড়তে বিক্রি করেন তিনি। সাহারুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ঘুরে এক মণ আমতা (আমসত্ত্ব) কিনতে পেরেছি৷ অথচ গত বুধবার একটি গ্রাম থেকেই ৫ মণ আমসত্ত্ব কিনেছি। আমি ছাড়াও একই সময়ে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী আমসত্ত্ব কিনেছে। গতবছর ৭০-১০০ টাকা দিয়েও খুঁজে খুঁজে কিনতে হয়েছে। অথচ এবার দাম ৪০-৫০ টাকার মধ্যেই। অনেক ফলন হয়েছে, তাই দাম এতো কম বলে জানান তিনি।

প্রতিবছর বাড়িতে আমসত্ত্ব তৈরি করে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন গৃহিণী শাহনাজ বেগম। তিনি জানান, বাড়ির আশেপাশে অনেক বাগান। এখান থেকে আম কুড়িয়ে ও নিজেদের বাগানের আমগুলো সাধারণত বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এবছর আমের এতো কম দাম যে, তা বিক্রি না করে আমতা বানিয়েছি। কিন্তু আমতা বানিয়েও কোন লাভ হয়নি। কারন এবছর প্রায় অর্ধেক দাম হয়ে গেছে।

সারাদেশ থেকে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে আমসত্ত্ব সরবরাহ করেন চাঁপাই ম্যাংগো’র ব্যবস্থাপক শহিদুল হক হায়দারী। সারাদেশের গ্রাহকদের থেকে অর্ডার নিয়ে গ্রামে গ্রামে গৃহিণীদের নিয়ে কয়েকটি আমসত্ত্ব বানানোর দল গঠন করেছেন তিনি। সেসব নারীরা শহিদুল ইসলাম হায়দারীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমসত্ত্ব তৈরি করেন। এতে সেসব নারীরা দাম যেমন বেশি পান, তেমনি শহিদুল ইসলাম তাদের থেকে মানসম্মত আমসত্ত্ব সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, একদিকে আমের উৎপাদন বেশি, অন্যদিকে কঠোর লকডাউনের প্রভাবে আমের দাম কম। তাই গৃহিণীরা এবছর আমসত্ত্ব উৎপাদনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন বেশি হওয়ায় চলতি বছরে আমসত্ত্বের দাম অনেক কম।

মানসম্মত ও সঠিক উপায়ে বানালে অধিক দাম পাওয়া সম্ভব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শিবগঞ্জ সহ জেলায় এখনও বানিজ্যিকভাবে আমসত্ত্ব উৎপাদন শুরু হয়নি। তবে ভালো মানসম্মত আমসত্ত্ব পেতে নারীদেরকে সঠিক নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। কারন বাজারে থাকা বেশিরভাগ আমসত্ত্বের পুরুত্ব ঠিক নেই। আবার অনেকেই ভালো করে রোদে না শুকিয়ে বাজারজাত করেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এবছর ফলন বেশি হয়েছে। তবে ফলন বেশি হওয়ার থেকে করোনার বেশি প্রভাব পড়েছে আম ও আমসত্ত্বের দামে। করোনা পরিস্থিতির কারনে কঠোর লকডাউনের প্রভাবে আম বাইরে যেতে পারেনি। তাই অনেকেই আমসত্ত্ব উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু অধিক পরিমানে উৎপাদন হওয়ার কারনে দাম অনেক কমে গেছে।

আরবিসি/৩১ আগস্ট/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category