আরবিসি ডেস্ক: ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোডাগু জেলায় একটি কফিবাগানে তিন সপ্তাহ আগে একটি দগ্ধ লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। এই লাশের পেছনে একটি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, রমেশ নামে ৫৪ বছর বয়সী এক ব্যবসায়ী কয়েক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হন। পুলিশ এখন জানতে পেরেছে, তাঁর স্ত্রী নীহারিকা (২৯), প্রেমিক নিখিল (২৮) এবং সহযোগী অঙ্কুর মিলে এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ড গোপন করতে তাঁরা লাশ রাজ্যের সীমানার বাইরে ফেলে আসেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
৮ অক্টোবর পুলিশ কোডাগুর সান্তিকোপ্পার কাছে একটি কফিবাগানে দগ্ধ লাশ খুঁজে পায়। দেহটি শনাক্ত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, পুলিশ ওই এলাকার দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ স্ক্যান করতে শুরু করে। একটি লাল মার্সিডিজ বেঞ্জ তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই গাড়িটি রমেশের নামে নিবন্ধিত ছিল। তাঁর স্ত্রীই সম্প্রতি তাঁর নিখোঁজের অভিযোগ করেছিলেন। এরপর পুলিশ যাচাই করে দেখে, গাড়িটি তেলেঙ্গানা রাজ্যে নিবন্ধিত। পরে সেই রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
তদন্তের সময় রমেশের স্ত্রী নীহারিকার গতিবিধ সন্দেহজনক মনে হয়। হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রমেশ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন নীহারিকা। এ সময় দুই সহযোগী পশুচিকিৎসক নিখিল ও অঙ্কুরের নামও জানান।
পুলিশ জানতে পারে নীহারিকার শৈশবকাল সুখের ছিল না। তাঁর বয়স যখন ১৬ বছর, তখন বাবার মৃত্যু হয়। মা অন্যত্র বিয়ে করেন। তবে তিনি পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ভালো চাকরি শুরু করেন। তিনি অল্প বয়সে বিয়ে করেন, মা হন এবং পরে বিচ্ছেদও হয়। একসময় হরিয়ানায় ছিলেন। সেখানে আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন এবং জেলে যান। সেখানেই অঙ্কুরের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।
জেল থেকে বেরিয়ে নীহারিকা রমেশকে বিয়ে করেন। এটি রমেশেরও দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। ব্যবসায়ী রমেশ নীহারিকাকে বিলাসবহুল জীবন দিয়েছিলেন। নীহারিকা তাতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি রমেশের কাছে আট কোটি রুপি চান। হঠাৎ এত বড় অঙ্কের টাকার আবদারে রমেশ খেপে যান। এর মধ্যে নীহারিকা নিখিলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। নিখিল ও অঙ্কুরকে নিয়ে রমেশকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নীহারিকা। ১ অক্টোবর হায়দরাবাদের উপ্পালে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়িতে ফিরে নগদ টাকা এবং গাড়ি নিয়ে বেঙ্গালুরুতে যান। তাঁরা উপ্পাল থেকে ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের কোডাগুতে একটি কফিবাগানে লাশ ফেলে দেন। লাশটি একটি কম্বলে জড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনজন হায়দরাবাদে ফিরে আসেন এবং নীহারিকা রমেশের জন্য থানায় নিখোঁজের অভিযোগ দেন।