আরবিসি ডেস্ক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের আন্দোলন শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম থেকে। জুলাই গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সোমবার পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। অন্যথায় আগামী মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) চট্টগ্রাম থেকেই কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
রোববার (১৩ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রিয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘১৬ জুলাই চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে রক্তপাতের সূত্রপাত ঘটায় ছাত্রলীগ। এরপর ৩৬ জুলাই পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা চালিয়ে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায় ২০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়। তাই এই সন্ত্রাসী সংগঠনটিকে নিষিদ্ধে আমরা চট্টগ্রাম থেকেই আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছি। এটি শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি।’
রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কোটা আন্দোলন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের আন্দোলন। কিন্তু ছাত্রলীগ এই যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কিংবা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ না করে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তারা আধুনিক ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের বোনদেরকে রক্তাক্ত করেছে, ভাইদেরকে গুলি করে করেছে। এটি কোনো ছাত্র সংগঠন না, ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ গত ১৬ বছর দখলদারত্বের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে মিনি ক্যান্টনমেন্টের মতো ব্যবহার করেছে। যারা দূর দূরান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য আসতো তাদের হলে থাকতে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিতে হতো। ’
রাসেল বলেন, ‘ছাত্রলীগের হলরুম-গেস্টরুমের কালচার তাদেরকে অমানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিল। তাদের হাতে আবরার ফহাদের মত মেধারীদের প্রাণ দিতে হয়েছে। ’
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ছাত্রলীগ নামে সংগঠনকে আগামী সোমবারের মধ্যে যেন নিষিদ্ধ করা হয়। যদি না হয়, মঙ্গলবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম রাজপথে নামবে এবং আওয়ামী লীগের যতগুলো সংগঠন এবং তাদের দোসর রয়েছে তাদেরকে নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ছাত্রলীগকে জঙ্গি সংগঠন দাবি করে নিষিদ্ধের দাবি জানান দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
সে দিন তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার জন্য আমি সাত দিনের সময় দিয়েছিলাম। রোববার (১৩ অক্টোবর) সেই সময় শেষ হবে। রোববারের মধ্যে যদি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা না হয়, তাহলে সোমবার থেকে আমার দাবির সমর্থনে আপনারা এখানে (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়) আন্দোলন শুরু করবেন। নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আমি ঢাকায় মাঠে থাকবো।’
এদিকে, বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক সমাজের এ দাবি একটি জনপ্রিয় দাবিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক স্মরণসভায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা একটি জনপ্রিয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মতো কোনো কিছুকে নিষিদ্ধ করবো না। বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার আইন রয়েছে। আমরা সেই আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার প্রত্যাশা রাখি।’
জাগো নিউজের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কথা বলতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সংযোগ স্থাপন করা যায়নি। মূলত ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকেই দেশ ছেড়ে গেছেন।