আরবিসি ডেস্ক: রিমান্ড শেষে সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু ও শ্যামল দত্তকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পৃথক দুটি হত্যা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে তাঁদের বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়। সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা তাঁদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে দুজনের পক্ষে পৃথক জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শ্যামল দত্ত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ভাষানটেকে মোহাম্মদ ফজলু নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাষানটেক থানার এসআই মো. সাহিদুল বিশ্বাস কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে শ্যামল দত্তের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় শ্যামল দত্তকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।
এরপর তাঁকে রাত ১১ টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়। পরে তাঁকে ভাষানটেক থানায় দায়ের করা ফজলু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
১১ সেপ্টেম্বর নিহতের বড় ভাই মোহাম্মদ সবুজ (৪২) ভাষানটেক থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ২৫ সাংবাদিকসহ ১৩৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভাষানটেক এলাকায় দিগন্ত ফিলিং স্টেশনের সামনে হাসিনা সরকারের পতন উদ্যাপনের সমাবেশে ফজলু গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এজাহার নামীয় আসামিদের নির্দেশে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে।
মোজাম্মেল বাবু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর রমনা মডেল থানার মামলায় একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল হক বাবুকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. পায়েল হোসেন তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে মোজাম্মেল বাবুর পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালানোর সময় মোজাম্মেল হক বাবুকে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও পোড়াকান্দুলিয়া সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। পরে রাত ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে তাঁদের আনা হয়। পরে লিজা আক্তার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়।
৫ সেপ্টেম্বর নিহতের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
এ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর শান্তিনগর মোড়ের কানিফা টাওয়ারের ১৪তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ওই বাসার গৃহকর্মী লিজা আক্তার (১৯) গুলিবিদ্ধ হন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাস্তায় তখন মিছিল–সমাবেশ চলছিল। আন্দোলন দমন করার জন্য পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালান। ওই গুলি এসে লিজা আক্তারের পেটে লাগে। পেট ভেদ করে গুলি পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। তাঁকে স্থানীয় অরোরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন লিজা আক্তার। আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে গুলি ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।