বিশেষ প্রতিবেদক : ভারতের সাথে উত্তরাঞ্চলের চোরা চালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এই রুট দিয়ে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান হয় মাদকদ্রব্য ও গবাদিপশু।
অবৈধ এই ব্যবসার অর্থ আবার হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় রুপান্তরিত হয়ে ফিরছে দেশে। এর ফলে, অঞ্চলটির বহু পরিবার এখন কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছে৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলা দিয়ে মাসে অন্তত ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য হেরোইন পাচার হয়ে দেশে ঢুকে। এর বাইরে এ সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া গরু, মহিষসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য। এসব আনতেও মাসে কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তবে, টাকা গুলোর অধিকাংশই চলে যায় হুণ্ডিতে। কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ও কালোটাকা বৈদেশিক মুদ্রা হয়ে সাদা টাকায় পরিনত হওয়া৷ এ যেনো সোনায় সোহাগা।
এবছরের ২৯ জুলাই, মাদক ব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম রবির অন্যতম সহযোগী আদিল ঢাকা থেকে র্যাবের হাতে আটক হয়৷ এরপর বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মাদক ব্যবসার অর্থ স্বচ্ছ ও সাদা করতে হুন্ডির ব্যবহার করে এ চক্রটি। রবিউল ইসলাম রবির ছত্রছায়ায় কাবাতুল্লাহ ও আদিল হিরোইনের ব্যাবসা করে হয়েছে কোটি টাকা মালিক। এই চক্রের আরো দুই সদস্য হলো মোহাম্মদ আনারুল ইসলাম ও মো: বাবলু রহমান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানায়, অল্প সময়েই কাবাতুল্লাহ বনে গেছে ৩০ বিঘা স্থাবর সম্পত্তি ও একটি বিলাসবহুল বাড়ির মালিক। নামে-বেনামে রয়েছে আরো একাধিক সম্পত্তি ও লিকুইড মানি (কাঁচা টাকা)। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।
তিনি আরো জানান, রবির আরেক সহযোগী আদিলের নামে বেনামে রয়েছে ৩ থেকে ৪ টা বাড়ি ও একটি ইউরিয়া সারের দোকান। ২৫ বিঘা জমিসহ তার সম্পত্তির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, মাদকের অবৈধ অর্থ সাদা টাকায় পরিনত করার গুরু দায়িত্বে রয়েছেন হুন্ডি ব্যবসায়ি বাবলু রহমান। গোদাগাড়ী উপজেলার মাদক চোরাচালানের টাকা হুণ্ডির মাধ্যমে ভারতে পাচার করেন তিনি। জানা যায়, তার নামেও প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে।
অভিযুক্ত এ চক্রের সদস্যদের একাধিক প্রতিবেশীর বলছেন, অর্থ সম্পদ গুলো তাদের চোখের সামনে এক নিমিষেই ফুলে ফেঁপে উঠে৷ এ চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সী কিশোররা৷ ক্ষমতা ও অর্থের দাম্ভিকতায় বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খুলতে পারে না স্থানীয়রা।
তবে, সক্রিয় এই সদস্যদের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ি থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও জানা যায়৷