আরবিসি ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সফরে মুন্সীগঞ্জে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। তারা ওই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নাকি পতন ঘটাবে। তারা কি পেরেছে? বিগত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ঈদের পরে, পূজার পরে, বিভিন্ন সময়ের পরে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেয়ার চেষ্টা করেছে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের জন্য, তারা কি পেরেছিলো? আপনাদের একটি জিনিস খুব ভালো মনে রাখতে হবে। যেদিন ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে এবং ছাত্ররা সামনের সারিতে ছিলো সেদিনই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ছাত্র-জনতার উপরে বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের যেই আস্থাটি রয়েছে বাংলাদেশের তথাকথিত রাজনৈতিক দলগুলোর উপর বাংলাদেশের মানুষের সেই আস্থাটি আর নেই। আপনাদের উপরে বাংলাদেশের এত এত মানুষ যে আস্থাটি রেখেছে এখন সময় হচ্ছে তাদের আস্থার প্রতিদান দেয়া।’
সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের ডকুমেন্টসগুলো জীবন্ত রাখতে হবে। তারা চাইবে স্মৃতিগুলো ভুলিয়ে দিতে। যদি এগুলো ভুলে না যান তাহলে তারা আবার এসে ক্ষমতায় বসতে পারবে না। আগামীতে এই বাংলাদেশে যারা শাসন করবে কিংবা রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিবে, যদি তাদের উদ্দেশ্য থাকে আবার কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার কায়েম করার তারাও চাইবে আপনার স্মৃতি থেকে ফ্যাসিজমগুলো মুছে দেয়ার জন্য। তাই ফেসবুক পোষ্ট, ছবি, ভিডিও, ডায়েরি লেখা বা বইয়ের মাধ্যমে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কোয়ালিটির জায়গা থেকে স্কিলফুল হতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে সবই করতে হবে। কিন্তু প্রথম ও প্রধান কাজটি হলো পড়াশোনা ঠিক রাখা।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ ১৪ সদস্যের দল সরকারি হরগঙ্গা কলেজ মাঠে ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় অংশ নেয়। সেখানে ব্যানার-মিছিল নিয়ে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়।
এর আগে সকালে জেলা শহরের খালইস্ট এলাকায় আফতাবউদ্দিন কমপ্লেক্সের ৩য় তলার একটি রেস্টুরেন্টে আন্দোলনে মুন্সীগঞ্জের নিহত ও আহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। পরে সেখানেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন সমন্বয়করা। এতে জেলা জাতীয় পার্টির একাংশ, জামায়াতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী এই মতবিনিময় সভায় অংশ নেননি।
নিহত ও আহতদের পরিবারগুলো সারজিস আলমকে জানান, আন্দোলনের দিন অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলাকারী অনেক ব্যক্তি এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মামলা থেকে যোগসাজশে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আসামিদের ব্যাপারে প্রশাসনও শক্ত অবস্থান নিচ্ছে না। এছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অনেকে ৪ আগস্ট শহরের সুপারমার্কেটে আন্দোলনের বিভিন্ন ভিডিও-ছবি সারজিসকে দেখান। সারজিস আলম সকলের কথাগুলো লিখে নেন এবং আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ হতে বহন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এ সময় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলমের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল্লাহ সালেহী অয়ন, ইব্রাহিম নীরব, মোবাশ্বেরুল হাসান মৃধা, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি সমন্বয়ক আবদুল তাহরিব রায়হান প্রমুখ।