• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে দ্বিগুণ

Sonia khatun / ৫৬ Time View
Update : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আরবিসি ডেস্ক: সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নানা অজুহাতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে ইলিশের মূল্য বৃদ্ধি করেছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি ও বড় আকারের ইলিশ আর হাতের নাগালের বাহিরে পদ্মার ইলিশের দাম। ভোক্তা পর্যায়ের সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ দেশজুড়ে চলমান সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে নিয়মিত বাজার তদারকি না থাকায় কয়েক দফায় মূল্যবৃদ্ধি করেছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারি আড়ৎদারদের দাবি বাজারে ইলিশের চাহিদা বৃদ্ধ পাওয়ায় বেড়েছে দাম।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর মুন্সিগঞ্জ জেলায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের গড় চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন। তবে চাহিদা তুলনায় গত কয়েক বছরে কমেছে ইলিশের উৎপাদন। বর্তমান ইলিশ উৎপাদন পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, জেলায় সর্বশেষ ইলিশ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে ৯০০ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন। যা চাহিদা তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ইলিশের উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় প্রভাব পড়েছে মূল্যবৃদ্ধির ওপর।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে সদরের উপজেলার রিকাবীবাজার এলাকা, মিরকাদিম মৎস্য আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা বিক্রির উদ্দেশ্যে সাজিয়ে রেখেছেন ছোট, বড়, মাঝারি সহ বিভিন্ন আকারের ইলিশ। চলছে দরদাম কষাকষি আর এতে ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে মুখরিত পুরো আড়ৎ। এ সময় দেখা গেছে ৩শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম ওজনের ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে। আর মাঝারি আকারের ৬শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। এছাড়া বড় আকারের এক থেকে দেড় কেজি অথবা দুই কেজি ওজনের ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ২৭০০ থেকে ৩০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। আর বড় আকারের এসব ইলিশ সর্বনিম্ন বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ থেকে ২৯০০ টাকায়। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাদের মাঝে।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নানা কারণে মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাজারে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও বেতন বৃদ্ধি এবং ইলিশ সংরক্ষণে ব্যয় বৃদ্ধি, বরফের মূল্য বৃদ্ধিসহ হিমাগারে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল এর প্রভাব পড়েছে ইলিশের দামে। তবে বাজারে সরবরাহককৃত বেশিরভাগ ইলিশ উপকূলীয় হওয়াতে এখনো দাম ক্রেতাদের হাতের নাগালে রয়েছে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। কিন্তু কোথাও দেখা মিলছে না ঐতিহবাহী পদ্মার ইলিশের।

নূর মোহাম্মদ নামের এক ক্রেতার অভিযোগ করেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও যথাযথ তদারকি না থাকায় সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ইলিশের দাম। তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া গেলেও। এখন একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৭০০/২৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত। যার ফলে সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালে বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশের দাম। ফলে দ্রুত বাজার তদারকির তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এছাড়া শাহাবুদ্দিন বাচ্চু নামের আরেক ক্রেতা জানান,দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার চার সদস্যের পরিবার। বড় মেয়েকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে তাই ইলিশ কিনতে এসেছেন বাজারে। পরে দীর্ঘ সময় দরদাম করে ২৬০০ টাকা কেজি ধরে, ৫ কেজি ইলিশ কিনেছেন ১৩০০০ টাকায়। এতে ইলিশের উত্তাপ ঘাম ছুটিয়েছেন তার কপালে। তিনি বলেন,সামান্য বেতনে চাকরি করে উৎসব কিংবা পারিবারিক আয়োজনে ইলিশ কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। চাহিদার তুলনায় অর্ধেক ইলিশ কিনে খরচ হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ অর্থ। যার ফলে আক্ষেপ তৈরি হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে।

এদিকে, হঠাৎ ইলিশের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে মিরকাদিম মৎস্য আড়ৎয়ের সভাপতি ও স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী হাজী আকবর হোসেনের দাবি, সরবরাহ সংকট দেখা না দিলেও নানা কারণে বেড়েছে ইলিশের দাম। তিনি বলেন, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে আমদানি খরচ। এছাড়া আড়ৎয়ের জমা খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইলিশের দাম। তবে পদ্মার ইলিশের দেখা মিলছে না কোথাও। অন্যদিকে সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পেলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কমে আসবে ইলিশের বাজার মূল্য। বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকায় আগের চেয়ে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে ইলিশের বাড়তি চাহিদা থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়ান বলে স্বীকার করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ জানান, মাছের বাজারে ইলিশের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই শুরু হবে নিয়মিত বাজার মনিটরিং। এতে পর্যায়ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। তিনি আরও বলেন, ক্রেতাদের পক্ষ থেকে অনিয়মের যে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলেই নেয়া হচ্ছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা।

এছাড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এটিএম তৌফিক মাহমুদ জানান, অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না জালের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ইলিশের উৎপাদন। প্রতিবছরই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। যার ফলে বিগত কয়েক বছরে মুন্সিগঞ্জ জেলায় কমেছে ইলিশের উৎপাদন। এছাড়া বছরের সুনির্দিষ্ট কিছু সময়ে জাটকা নিধন, মজুদ ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি কোনভাবেই মানেন না জেলেরা। যার ফলে ব্যাহত হয় ইলিশের উৎপাদন। টানা দীর্ঘ সময় ইলিশের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ইলিশের বাজারে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সেটির একটি বড় প্রভাব রয়েছে।

তিনি আরও জানান, বছরজুড়ে ইলিশের চাহিদা থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। বিশেষ করে পদ্মা ও মেঘনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ইলিশের দাম সব সময় ক্রেতাদের হাতের নাগালে থাকবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category