• রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন

২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল যশোর, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নে চরম দুর্ভোগ

RATUL ISLAM / ২৮ Time View
Update : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

আরবিসি ডেস্ক : যশোরে ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, শহরের নিচুঅঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। রোববার রাত ১০টা থেকেই ভারিবর্ষণ শুরু হয়। থেমে থেমে হওয়া বজ্রসহ এই বৃষ্টিপাত চলে সোমবার বেলা ১০টা পর্যন্ত। তবে সূর্যের দেখা মিলেছে দেড়টার পর।

২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিতে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়েছে পানি। অধিকাংশ রাস্তায় গোড়ালি, আবার কোথাও হাঁটুপানি জমেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।

তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত নালা ব্যবস্থাপনা না থাকা, বিদ্যমান নালার অচলাবস্থা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পৌরসভার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এদিকে,  ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) চাঁচড়ার গ্রিড ফেলের সঙ্গে চাঁচড়া উপকেন্দ্রে পানি উঠায় বন্ধ করা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। ফলে সোমবার ভোর ৪টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিল শহরের ৫৫ হাজার গ্রাহক। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।

যশোর বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস জানায়, রোববার রাত ৯টা থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ৬ জুলাই ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

সেই রেকর্ড ভেঙে গত ১৫ ঘন্টায় চলতি মৌসুমে ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। অতিভারি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতায় একরকম শহরে বন্যার রূপ নিয়েছে। টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে যশোর শহরের বেশিরভাগ এলাকা। শহরের তুলনামূলক নিচু এলাকায় যেখানে অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে সেসব  স্থানে রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ক্রমাগত বাড়ছে পানির পরিমান। অধিকাংশ স্থানে হাঁটু সমান পানি জমেছে, কোথাও কোথাও মাজা পানি। বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের বহু রাস্তা ও গ্রামাঞ্চলের মাঠঘাট পানিতে থৈ থৈ করছে। ভেসেছে পুকুর ও মাছের ঘের। শহরের অন্তত ৩০টির বেশি প্রধান সড়কে পানি জমে আছে। এছাড়াও অসংখ্য লেন বাইলেনে রয়েছে পানি। খড়কি এলাকার শাহ্ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপপট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, আশ্রম রোড, শংকরপুর, রেলরোড, মিশনপাড়া, রেলস্টেশন, চোপদারপাড়া, বেজপাড়া তালতলা, টিবি ক্লিনিক মোড়, পুরাতন কসবা, পুলিশ লাইন টালিখোলা, বিমানবন্দর রোড ও ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও শহরের ছোট ছোট সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুইপাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা মিশ্রিত নোংরা পানি উপচে পড়েছে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে আছেন পৌরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এছাড়াও বাকি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে জমেছে পানি।

শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা আলতা বানু বলেন, কয়েকশ’ বাড়িতে পানি উঠেছে। আমাদের বাড়ির নিচতলায় হাঁটুপানি জমেছে। টিউবওয়েলের কিছু অংশ পানিতে ডুবেছে। ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছি আমরা। এদিকে রান্নাঘরেও পানি প্রবেশ করায় সকালের রান্নাও বন্ধ।’ একই এলাকার আকবর হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়। থাকে দুই তিন দিন। কিন্তু রাত থেকে যে ভারি বৃষ্টি হয়েছে, এতে ভোগান্তি দ্বিগুন হয়েছে।’

শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশকে শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়োনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ঐ পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত দেড় দশকেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা ও নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রতিবছর পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হয়। এ বছরও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পানি সরাতে কাজ করা হয়েছে।

এদিকে, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) চাঁচড়ার গ্রিড ফেলের সঙ্গে চাঁচড়া উপকেন্দ্রে পানি উঠায় ৯ ঘন্টা বন্ধ করা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। পরে সংযোগ চালু হলেও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ সেবায়।

শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার বাসিন্দা তৌফিক বলেন, অন্তত ৯ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলাম। দুপুরে আসলেও মাঝে মধ্যে আসলেও দীর্ঘক্ষণ থাকছে না। খুব দুর্ভোগে পড়েছি।

ওজোপাডিকো যশোরের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, চাঁচড়া উপকেন্দ্রে গ্রিড ফেলের সঙ্গে পানি উঠায় বন্ধ করা হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। সংযোগ চালু করা হলেও পুরোপুরি বিদ্যুৎ সেবা স্বাভাবিক হয়নি। দ্রুতই সমস্যা সমাধান হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category