আরবিসি ডেস্ক: পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয় করেছে বাংলাদেশ। গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪তম টেস্টে এসে প্রথম জয় পেলো বাংলাদেশ। এর আগে তাদের মাটিতে আগে কখনো ড্রও করতে পারেনি টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ২০১৫ সালে একটি ম্যাচেই ড্র করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এর আগে ১৩টি টেস্ট ম্যাচ খেললেও কোন টেস্টে জয় পায়নি বাংলাদেশ। অবশেষে গতকাল ২৪ বছরের অপেক্ষা ঘুচলো বাংলাদেশের। এই ম্যাচে একটি দুর্দান্ত রেকর্ডও করেছে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে মাত্র ১৪৬ রানে অলআউট করে সফরকারী বোলাররা। টাইগারদের বিপক্ষে টেস্টে এটিই পাকিস্তানের সর্বনিম্ম স্কোর। এর আগে ২০০৩ সালে মুলতানে ১৭৫ রানে অলআউট হয়েছিল পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে টস হেরে আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। পরে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৫৬৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান ১৪৬ রানে অলআউট হলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ কোন উইকেট না হারিয়ে ৬.৩ ওভারে ৩০ রান করে টেস্ট জিতে ১০ উইকেটে। টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে এখন শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত বাদে সবাইকে হারাল বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ৩০ রান তাড়ায় নেমে কোনো উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাকির হাসান আর সাদমান ইসলাম মাত্র ৬,৩ ওভারে ৩০ রান করে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। সালমান আগাকে সুইপ করে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন জাকির। জাকির ১৫ রানে আর সাদমান ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল শেষদিনের শুরুটা দারুণ করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে শান মাসুদকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। মাসুদের ব্যাটে লেগে বল যায় লিটন দাসের গ্লাভসে। ৩৭ বলে ১৪ রান করেছিলেন মাসুদ। এরপর ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে নিয়ে দলের হাল ধরেন বাবর আজম। এবার দলকে সাফল্য এনে দেন নাহিদ রানা। তার বল চলে যায় ৫০ বলে ২২ রান করা বাবরের স্টাম্পে। পরের ওভারে এসে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলে দেন সাকিব আল হাসান। তার বলে স্টাম্পিং হন চার বলে কোনো রান না করা সৌদ শাকিল। তাকে ফেরানোর পর মরিয়া হয়ে ওঠেন নানাদিক থেকে চাপের মুখে থাকা সাকিব। প্রতিটি বলই তিনি করছিলেন ভীষণ মনোযোগ দিয়ে। ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে রিজওয়ানের প্যাডে বল লাগলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করে বাংলাদেশ। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিতে চায় তারা, কিন্তু ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে ১৫ সেকেন্ড সময়। সাকিব পরের বল করতে গেলে উইকেট থেকে সরে যান রিজওয়ান। তখন হাওয়ায় বল ছুড়ে মারেন সাকিব,সেটি লিটন ধরেন। ওই ওভারের শেষ বলে বোল্ড হয়ে যান আব্দুল্লাহ শফিক। ৮৬ বলে ৩৭ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। চাপ আরও বেড়ে যায় এক বল পরই সালমান আগা আউট হলে। কোনো রান করার আগেই স্লিপে দাঁড়ানো সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। সেশনের বাকি সময়টুকু শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে কাটিয়ে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। বিরতি থেকে ফেরার এক ওভার পরই মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ আউট হন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এরপর নাসিম শাহকে আউট করেন সাকিব। তবুও বাংলাদেশের জয়ের পথে কাঁটা হয়েছিলেন রিজওয়ান। তার ব্যাটে চড়েই লড়াই করার স্বপ্ন দেখতে থাকে পাকিস্তান। আগের ইনিংসে দেড়শ ছাড়ানো ইনিংস খেলা রিজওয়ান এবারও পেয়ে যান হাফ সেঞ্চুরি। তাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন খুররম শেহজাদও। বাংলাদেশের হতাশাটা লম্বা হতে দেননি মিরাজ। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে আনেন রিজওয়ান। ৮০ বলে ৫১ রান আসে এই উইকেটরক্ষকের ব্যাট থেকে। তার বিদায়ের পর পাকিস্তানের অলআউট হতেও আর বেশি সময় লাগেনি। ১৪৬ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা, বাংলাদেশের বিপক্ষে যেটি তাদের টেস্টে সর্বনিম্ন। মিরাজ চার ও সাকিব নেন তিন উইকেট।