আরবিসি ডেস্ক :
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি করা হয় ১৩ আগস্ট। রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার মুদিদোকানি আবু সায়েদ নিহত হওয়ার ঘটনায় এ মামলা করা হয়। এরপর গতকালের ৪টিসহ এখন পর্যন্ত ১২টি হত্যা মামলা করা হলো। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীকে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর বাইরে শেখ হাসিনা ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দুটি আবেদন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে মারা যান শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-তাহির। এ ঘটনায় তাহিরের বাবা আবদুর রহমান গতকাল রংপুরের কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন থানার আমলি আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, রংপুর রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি (সদ্য অবসরে) আবদুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সদ্য অবসরে) মো. মনিরুজ্জামান, রংপুর মেট্রোর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, রংপুর মেট্রোর (এডিসি ক্রাইম) উৎপল কুমার রায়, রংপুর মেট্রোর এডিসি (ডিবি) নুর ইসলাম পাটোয়ারী, মেট্রো কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোন্তাসির বিল্লাহ, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাসিমা জামান, রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন।
একই দিন পুলিশের গুলিতে ফল ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম মারা যান। মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে গতকাল একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় রংপুর মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের নেতা, সিটির কাউন্সিলরসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জয়পুরহাটে ৪ আগস্ট কলেজছাত্র নজিবুল সরকার ওরফে বিশাল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। গতকাল দুপুরে তাঁর বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে জয়পুরহাটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমানের আদালতে মামলা করেন। এই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নাটোরে আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট ইয়াসিন ইসলাম (১৭) নামের এক ছাত্রকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে গতকাল তাঁর বাবা ফজের আলী বাদী একটি মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ১১১ জনকে।
১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে রাজধানীর সূত্রাপুরে মারা যান কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ওমর ফারুক। এ ঘটনায় গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে মামলা করেন নাসরিন বেগম নামের একজন। সূত্রাপুর থানার পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, মো. আসাদুজ্জামান খান, হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
সাঈদ হত্যা মামলা
শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গতকাল রংপুরে মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানসহ ১৭ জনকে।
আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলাম। আবু সাঈদ মারা যাওয়ার পর আমরা ডিসিশনগুলো নিতেই দেরি করছি। ১৭ জন ছাড়া আরও ৩৫ জনের মতো অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আশা করি, ন্যায়বিচার পাব।’
আরও তিন মামলা
এ ছাড়া ২ আগস্ট নরসিংদীতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা বিএনপির অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সদরের সাবেক সংসদ সদস্য সরোয়ার কবিসহ ৯৮ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সদ্য সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ, তাঁর স্ত্রী ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র খন্দকার শাইলা পারভীন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।