আরবিসি ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলন পরে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে রূপ নিলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ফাইল ছবিরাজনৈতিক দল গঠনের চিন্তাভাবনা নেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যম বাজেভাবে বা উদ্দেশ্যমূলক অনুবাদ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলম।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দ্বৈত প্রাধান্য কমিয়ে আনতে এবং সংস্কার হাসিল করতে নিজেদের রাজনৈতিক দল আনার চিন্তাভাবনা চলছে সমন্বয়কদের মধ্যে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে হটানোর পর দ্রুত নির্বাচন ও অন্যান্য ইস্যুতে নিজেদের চাওয়া পূরণে এই দল আনা হবে। তিনজন সমন্বয়কের বরাত দিয়ে আজ শুক্রবার এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে মাহফুজ আলম বলেন, ‘রয়টার্সে আমার বক্তব্য ছিল, আমরা রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এখনই ভাবছি না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য আমরা কাজ করছি। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখা এবং সরকারকে সংহত করা আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে আমরা আগামী বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে ও কাজ করব।’
মাহফুজ আরও বলেন, ‘এ কাজে অন্তত এক মাস লাগবে। আর, রয়টার্সও লিখেছে এক মাস পর নির্ধারিত হবে আমরা দল করব কি করব না! তবে, রয়টার্স একটি ভুল করেছে, নাগরিকদের বদলে তারা ভোটার শব্দটি ব্যবহার করেছে। অথচ, নির্বাচনী রাজনীতি নিয়ে আমাদের খুব কমই কথা হয়েছে। কৃষ্ণ কৌশিককে (রয়টার্সের সাংবাদিক) আমি লিখেছি, উনি হয়তো এটা এডিট করে দেবেন।’
রয়টার্সের সঙ্গে আলাপের বিষয়ে এই সমন্বয়ক বলেন, ‘রয়টার্সের সাংবাদিক বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন, দ্বি–দলীয় কাঠামো নিয়ে এবং তা উতরে যেতে রাজনৈতিক দল করব কিনা। আমি বলেছি, আমরা দল বা ব্যক্তি নয়, ব্যবস্থার সংস্কার চাচ্ছি। যাতে যে দলই আসুক তাকে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হয়। কিন্তু, এমনভাবে বলা হলো যেন আমি মাইনাস টু চাচ্ছি। যেটা আমার উদ্দেশ্য না অবশ্যই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখনকার লক্ষ্য, রাজনৈতিক লড়াইকে সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে গঠনমূলক কাজের দিকে চালিত করা। উপযুক্ত সময়ে রাজনৈতিক গঠন/গড়ন কেমন হবে, তা সবাই জানতে পারবেন।’
প্রায় একই কথা বলেছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রাজনৈতিক দল গঠন আমাদের গণ–অভ্যুত্থানের অভিমুখ না। এই মুহূর্তে প্রয়োজন অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, নতুন করে দেশগঠন–সংস্কার ও অভ্যুত্থানের স্পিরিট ও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা। ছাত্র–জনতা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করবে।’
নাহিদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের এক দফার অংশ ছিল। সে জন্য বিস্তর কাজ ও রাজনৈতিক কার্যক্রম প্রয়োজন। জনগণের সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করতে চাই।’
রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ছাত্র–জনতা অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষায় সামাজিক–রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে করবে এবং সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে।’