নিজস্ব প্রতিবেদক : কলেজে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এরপরই চাপের মুখে পদত্যাগ করেন অধ্যক্ষ। তবে ছাত্রদল বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
যদিও একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন ও মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা অধ্যক্ষকের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷। অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। পরে একটি পদত্যাগপত্র প্রিন্ট করে আনা হলে অধ্যক্ষ সই করেন। পরে আমিনা আবেদীন এই ব্যাপারে ফেসবুকে তিনটি স্ট্যাটাস দেন। এর একটিতে তিনি লেখেন, তাকে মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আরেকটিতে লেখা হয়, তাকে ও তার ছেলেকে শারীরিকভাবে হামলা করেছে ছাত্রদল। অন্য স্ট্যাটাসে অধ্যক্ষ লেখেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় তার জীবন হুমকির মুখে।
আমিনা আবেদীনের ছেলে নিজেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলেন। তার মাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সেলিম রেজা নিউটন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের বেশকিছু শিক্ষার্থী জড়ো হন। তারা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আবেদন নিয়ে আসেন। সেই আবেদনে সই করেন অধ্যক্ষ। এর পর কলেজ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে পদত্যাগের দাবিতে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুর ১২টার দিকে তারা অধ্যক্ষকে এক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে আলটিমেটাম দেন।
তবে সিটি কলেজ অধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে চান না। এ সময় তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ, তার স্বামী ও ছেলেকে মারধর করা হয়। এ সময় অধ্যক্ষের ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে অধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে তাদের বানানো কাগজে পদত্যাগ ও বদলির আবেদনে স্বাক্ষর করেন।
সিটি কলেজ অধ্যক্ষ আমিনা আবেদীন বলেন, তিনি কারও পা চেটে অধ্যক্ষ হন নি। নিজের যোগ্যতায় এ পদে এসেছেন। সকালে শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করেন। এরপর আরও শিক্ষার্থী এসে তাকে অবরুদ্ধ করে পদত্যাগ করতে বলেন। তারা ছাত্রদলের লিমন নামের একজনের নেতৃত্বে আসে। তিনি অসুস্থ বোধ করায় চলে যেতে চান। এ সময় অটোরিকশার মধ্যে তার ছেলেকে মারধর করা হয়। তাকেও আঘাত করা হয়। এ খবর পেয়ে তার স্বামী কলেজে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। পরে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে তিনি তাদের বানানো আবেদনে সই করে কোনোভাবে বাসায় ফিরেন। এখনও তিনি আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
তবে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমন অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগটি সরাসরি অস্বীকার করেছেন। বলেন, তিনি অনেক পরে গিয়েছিলেন। মূলত শিক্ষার্থীরাই অধ্যক্ষকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিয়েছিল।
আর রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক নজরুল হুদা বলেন, তিনি সিটি কলেজের পাশেই থাকেন। তাই সেখানে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে সে কারণে তিনি গিয়েছিলেন এবং অনেক পরে গিয়েছিলেন। তিনি গিয়েই অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করে আনেন। এছাড়া তেমন কিছুই জানেন না। শিক্ষার্থীরা আগে কাউকে মেরেছেন কি না সেটাও জানেন না।