স্টাফ রিপোর্টার : সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে রেগে গিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের বহুল বিতর্কিত সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলামের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘তোমার প্রবলেম হলো তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’
সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযোগের প্রমাণ করার জন্য তাঁর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তা না হলে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। সাংবাদিকদের এমন তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান এমপি ফারুক। বৃহস্পতিবার দুপুরে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে।
এ দিন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল শপথ নেওয়ার পর প্রথম তাঁর অফিসে যান। বেলাল এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ করেই এ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হন। এমপি ফারুক সমর্থিত প্রার্থী সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পরাজিত হন। সাংবাদিকরা খবর পান, বেলাল উদ্দিন সোহেলের প্রথম কর্মদিবসেই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা হবে। এ সভায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীও থাকবেন। সেখানে বেলাল উদ্দিনকে অফিসে বসতে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। এমন খবরের ভিত্তিতেই সাংবাদিকরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবস বলে তাঁর কয়েকশো নেতাকর্মীও সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বেলালের কর্মী-সমর্থকদের বের করে দিচ্ছেন। ইউএনও নিজেই হ্যান্ডমাইকে বার বার নেতাকর্মীদের চলে যেতে বলছিলেন।
এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০-৪০ জন নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে আসেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এসেই তিনি ‘এদিকে আসো, এদিকে আসো। সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আসো’ বলে সাংবাদিকদের ডাকেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এই লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাঁকে আমি দুইবার রিং করেছি যে, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব কি না আই ডোন্ট নো। বাট তাকে আমি দুইবার রিকোয়েস্ট করেছি এইগুলোকে হঠানোর জন্য।’
সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম দিন আসতে পারে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সাথে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।’ এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সঙ্গেও তো অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?’
এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান এমপি ফারুক। তিনি বলেন, ‘এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো- তুমি অলওয়েজ বায়াস্ট হয়ে পয়সা খেয়ে প্রশ্ন করো। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’
সাংবাদিকরা এ সময় বলতে থাকেন, ‘আপনি এটা খারাপ বললেন। আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ এ সময় ফারুক চৌধুরী প্রতিবাদ করতে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিনের নাম ধরে বলেন, ‘আমি তোমাকে এ কথা বলি নাই। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাঁকে বলেছি।’ তখন সাংবাদিকরা বলতে থাকেন, ‘উনি আমাদের সভাপতি। আপনি একজন সাংবাদিককে এ কথা বলতে পারেন না। আপনাকে স্যরি বলে যেতে হবে। আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না।’
সাংবাদিকদের তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে গিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে চলে যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যাকে তাকে যখন তখন অপমানজনক কথা বলেন। তিনি কিছুদিন আগেই নিজের এলাকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়েছেন। তাঁকে অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার প্রেক্ষিতে যে কথা বলেছেন তা সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক।’
ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান রকি। তিনি বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পুরো সাংবাদিকসমাজকে অপমান করে কথা বলেছেন। তিনি যদি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা না চান, তাহলে তার সমস্ত ইতিবাচক সংবাদ বয়কট করা হবে। সাংবাদিক ইউনিয়নও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’
উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ঘটনার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে তাঁর সঙ্গে অনুসারীরা প্রথম দিন গিয়ে থাকেন। এ জন্যই মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে এসেছিল। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশ্যে আসেননি। এ রকম কেউ চিন্তাও করে না।’
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী তাঁকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে সমাবেশ’ করার সঙ্গে ইউএনওর সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোন কথা বলতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এমপি সাহেব কী বলেছেন তা শুনিনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইউএনও আতিকুল ইসলাম ভাল কাজ করছেন। স্থানীয় রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। আর একজন সংসদ সদস্যকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে তা গোদাগাড়ীর ইউএনও দিচ্ছেন এবং আগামীতেও দিয়ে যাবেন।’
আরবিসি /৩০ মে/ রোজি