নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা : পাবনা জেলায় এই মৌসুমে বাদাম চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে চরাঞ্চলের কৃষকরা। পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, সুজানগর, বেড়া উপজেলায় ছোট-বড় মিলে রয়েছে দেড় শতাধিক চর ।
এসব উপজেলায় বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর পদ্মা-যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে বিস্তির্ণ অঞ্চলে জেগে উঠেছে ১শ ৪৯টি চড়। চরবেষ্টিত অঞ্চলের মাটি বেলে হওয়ায় বাদাম চাষের জন্য খুব উপযোগী। বাদাম লাভজনক ফসল।
অকাল বন্যা না হলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। বাদামের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত নারী-পুরুষ বহু শ্রমিকের সাথে যুক্ত থাকে। গত বছর ভালো ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এসব চরে এখন বাদাম চাষ করছেন অনেক চাষি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলি জানান, জেলার চর পেচাকোলা, চরআড়ালিয়া, সাঁড়াশিয়া, চরসাফুল, চরনাগদা, চরঢালা, চরকল্যাণপুর,পূর্বশ্রীকন্ঠদিয়া,পদ্মারচর,চরযমুনা,বাইরচর,শ্রীপুর,খিদ্রদাশুরিয়া,মুরাদপুর,বরাংগাল,ঘোড়জান,নাকালিয়া,লক্ষীপুর,কামারপুর চর,পাকশি, তারাপুর, আড়মবাড়িয়া, ভাদুর্ডাঙ্গী , আড়িয়া গোহাইলবাড়ী, নয়নপুর চরাঞ্চলসহ অন্যান্য চরে বাদামের ব্যাপক আবাদ হয়েছে।
এবার বাদাম উৎপাদন লক্ষমাত্রা ৫ হাজার ৩শ ২৯টন নির্ধারণ করে ২ হাজার ২শ৯৫ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালুর ওপর সবুজ বাদাম গাছের সমারোহ। কৃষকেরা জানান, বাদামের খেত থেকে আগাছা কেটে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যায়।
তেমন সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের আড়াই থেকে তিন মাস পর মে মাসের মধ্যেই সংগ্রহ ও বিক্রি করা যায় বাদাম। ধানের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় অনেকেই বাদাম চাষে ঝুঁকছেন।
ভাদুর্ডাঙ্গী এলাকার সাকিবুল, আব্দুল মালেক এবং আড়িয়া গোহাইলবাড়ী গ্রামের মতিউর, নয়নপুর চরের চাষি শাহিন মোল্লা বলেন, ” চরের বেলে দো-আঁশ মাটিতে বাদাম ফলন ভাল হয় গত বছর সাড়ে চার বিঘা জমিতে আমরা বাদাম চাষ করে বাম্পার ফলন পাই, সেই সাথে মূল্যটাও ভালো পেয়েছি। তিন মাসে এই ফসল ঘরে তোলা যায়।
অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে বাদাম আবাদে পরিশ্রম ও খরচ অনেক কম।” নয়নপুর গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত আদর্শ কৃষক মাহফুজ আলম বলেন, “বাদাম আবাদে চরাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় বাদামে কৃষক ভালো সাফল্য পাচ্ছেন এবং বহু মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
বাদাম লাগানোর ৯০ দিনের মধ্যে তা তোলা শুরু হয়। প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১৫ মন বাদাম হয়ে থাকে। লাভের অংক ভালো হওয়ায় দিন দিন বাদাম আবাদের পরিধিও বাড়ছে। প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মত। হাট-বাজারে প্রতিমণ আদ্র বাদাম দুই হাজার ৮শ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
সদর উপজেলার বাদামচাষি চর তারাপুরের আলাউদ্দিন বলেন, ‘নদীভাঙন মানুষেরা বেশির ভাগ সময় আমন ধান লাগালে বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। এখন জমিগুলোতে বাদাম চাষ করা হচ্ছে। এসময়ে বন্যা হয় না।
আর বাদাম মাটির নিচে হয়, পোকামাকড় কামড়াতে পারে না। এ আবাদ ভালো। ওষুধপাতি তেমন একটা দেয়া নাগে না।’ তিনি এবার ১০বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন।
তার ধারণা, আবহাওয়া অনুক’লে থাকলে ভাল ফলন পাবেন। গত বছর ৭ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে ভালো লাভ করেছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জামাল উাদ্দন বলেন, ‘চাষিরা বাদাম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন আবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগের খেত কর্মী ও ফসল বিশেষজ্ঞরা খেতের সেবা প্রদান এবং চাষীদের সাথে মতবিনিময় করে তাদের মাটি চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে সর্বোত্তম হার অর্জনের জন্য শিক্ষাদান করছেন।
এতে করে কৃষক আরো উদ্বুদ্ধ হয়ে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন’। আশা করছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
আরবিসি / ১৮ ফেব্রুয়ারী / অর্চনা