আরবিসি ডেস্ক : পৃথিবীতে জন্মের পর থেকে আমৃত্যু কেউ সুখে বসবাস করেন আবার কাউকে সারা জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। তাদের জীবনের সংগ্রাম যেন শেষ হয় না। এমনই জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী চরিত্র- নগরীর টুলি বেগম। স্বামী-সন্তান ছেড়ে গেছে অনেক বছর আগেই। এখন ৪৫ বছর বয়সী টুলি বেগম এক অসুস্থ মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে ভাড়া থাকেন নগরীর রায়পাড়া বস্তি এলাকায়।
মাথার ওপর যেই আশ্রয় আছে, সেটিরও প্রতি মাসে ভাড়া দিতে হয়। মেয়েটাও প্রায় সব সময় অসুস্থ থাকেন, তার ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় জীবিকার তাগিদে রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ঠিকঠাক তিন বেলা খাবার জোটে না। এখন কিভাবে বাড়ি ভাড়া দিবেন এবং মেয়ের চিকিৎসা করাবেন তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছিল টুলি বেগমের। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জীবন যুদ্ধে হার না মানা টুলি বেগমের সংগ্ৰামী জীবন-যাপনের বিষয়টি জানতে পেরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তাৎক্ষণিক তাকে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজ বাংলোতে দাওয়াত দিয়ে শাড়ি, কম্বল, খাদ্য দ্রব্য ও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও দ্রুত সময়ের মধ্যে পবা উপজেলায় বাড়ি করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সরকার অসীম কুমার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আনিসুল ইসলাম, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টুলি বেগম জানান, ‘প্রতিদিন সকাল ৭টায় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩শো টাকা জমা চুক্তিতে রিকশা চালায়। মেয়ে চালক বলে আমার রিকশায় অনেকেই উঠতে চায় না। তবুও মানুষের কাছে হাত না পেতে তিন চাকার রিকশায় ভর করে, দিন শেষে যা আয় হয় সেটা দিয়েই অনেক কষ্টে সংসার চালায়। ছোটবেলা থেকেই কখনো কাগজ কুড়িয়ে কিংবা কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করে জীবন যাপন করেছি। বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী ছেড়ে চলে গেলে সন্তানদের নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করি। বর্তমানে অসুস্থ মেয়ের ও নাতির ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে। তাই অভাবের তাড়নায় জীবিকার তাগিদে রিকশা চালিয়ে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে ঠিকঠাক তিন বেলা খাবার জোটে না।
টুনি তার প্রত্যাশার কথা আরও জানান, আমার একটা প্রত্যাশা ছিল- মাথা (বাড়ি) গোঁজার ঠাঁইয়ের। আমার কষ্টের কথা জেনে ডিসি স্যার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আজকে ডিসি স্যার নিজ বাসভবনে দাওয়াত দিয়ে আমার নিদারুণ কষ্টের কথা শুনেছেন এবং কম্বল, শাড়ি ও খাদ্য দ্রব্য উপহার দিয়েছেন। এছাড়াও আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
অশ্রুসিক্ত নয়নে টুলি বেগম আরও জানান, নিজের একটা বাড়ির দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল, বাড়ি থাকলে ভাড়ার টাকা বেঁচে যাবে। তখন আমার এই অল্প উপার্জনে সংসার চালাতে খুব একটা কষ্ট করতে হবে না। ডিসি স্যার, আমার এই স্বপ্নের কথা শুনে দ্রুত সময়ের মধ্যে পবা উপজেলায় একটি বাড়ি করে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, টুলি বেগম অবিরাম জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক নারী চরিত্র। দারিদ্র্যের কশাঘাতের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিনিয়ত বেঁচে আছেন তিনি। এক সময় তিনি রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেও সংসার চালিয়েছেন। এখন তিনি জীবিকার তাগিদে মানুষের কাছে হাত না পেতে, নিজেই রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
টুনির প্রত্যাশার বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, টুলি’র বিষয়টি জানতে পেরে এরই মধ্যে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাকে আজকে সন্ধ্যায় বাংলোতে ডেকে কম্বল, শাড়ি ও খাদ্য দ্রব্য দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পবা উপজেলায় তাদের মাথা গোঁজার জন্য বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেখানে যত দ্রুত সম্ভব তাকে বাড়ি করে দেওয়া হবে জানান তিনি।
আরবিসি / ১১ ফেব্রুয়ারী / অর্চনা