আরবিসি ডেস্ক : নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের কারণে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কারেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ঠে আবুল কালাম আজাদ। সন্ত্রাসী কায়দায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাঁচি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি এবং তাঁর কর্মীসমর্থকের উপর হামলা অব্যাহত রাখে। নিজেকে তাহেরপুরের রাজা হিসেবে বিবেচনা করে কোন প্রকার ন্যায়-নীতির তোয়াক্কা না করে পেশী শক্তির জোর দেখিয়ে আসছিলেন। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও মানেননি কোন প্রকার আচরণবিধি।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করে ইলেকশন ইনকোয়ারী কমিটি। সেই কমিটির চোখে ধরা পড়ে নৌকার প্রার্থী আবুল আজাদের সকল অনিয়ম। আবুল কালাম আজাদ যেন মনোনয়ন পেয়েই এমপি হয়ে গেছে। এমনটি মনে করে ধরাকে সরাজ্ঞান করেননি। শান্ত বাগমারাকে অশান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেন কর্মী সমর্থক নিয়ে।
তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র হওয়ার কারনে তিনি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে জনতার মাঝে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন। সেই আবুল কালাম আজাদ নৌকার মনোনয়ন নিয়ে একই ভাবে বাগমারা জুড়ে সন্ত্রাসের জাল বিছিয়ে দিয়েছে। সে কারণে কাঁচি প্রতীকের পক্ষে যারা কথা বলছে তাদেরকে হামলা-মামলা আর নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। সেই সাথে কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনী পোস্টার, অফিস ভাংচুর, আগুণ দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া, পোস্টার লাগাতে না দেয়া, হুকমীসহ বাড়িঘরে হামলা অব্যাহত রেখেছেন।
নির্বাচনকালীন সময় তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একাধিক অভিযোগ পড়ে। সেই অভিযোগের সঠিত তদন্ত শেষে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছিল। গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে বাগমারা আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তা রুবিনা পারভীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনের সচিবের কাছে আলাদা দুটি প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছিলেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, রাজশাহী-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ও তার সমর্থকরা অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এনামুল হককে প্রাণনাশের হুমকিসহ প্রতিনিয়ত পোস্টার ছিঁড়া, প্রচার মাইক ও অফিস ভাঙচুর সহ হামলা করে যাচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে গোয়ালকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন গ্রাম পুলিশদের নিয়ে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের পক্ষে প্রচারণা করেন এবং এনামুল হকের পোস্টার, ব্যানার ও অফিস ভাঙচুর করেন। কাঁচি প্রতীকের সমর্থকদের হুমকিও প্রদান করছেন। এনামুলের পক্ষে এই অভিযোগ দায়েরের পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে সত্যতা পেয়েছে। তাই নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী-৪ (বাগামরা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন সময়ে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী তিনবারের সংসদ সদস্য এনামুল হককে প্রাণনাশের হুমকি, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করেছেন। গত ১২ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া দেড় মিনিটের একটি ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার সাথে যারা ভাল ব্যবহার করবে, তাদের কাছে আমি ফেরেশতা। যারা খারাপ করবে তারা পৃথিবী থেকে নাই হয়ে যাবে। একটা কথা বললাম। আজাহার-মাজাহার (এনামুলের সমর্থক) এলাকায় থাকবে না’। কালাম অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে আরো বলেন, ‘নৌকার বাইরে কথা বললে আজাহারের (কাঁচি প্রতীকের সমর্থক) চেহারা চেঞ্জ হয়ে যাবে। নৌকার বাইরে কোনো মাস্তানি চলবে না। এনামুলের মতো লোককে ভুলি দিয়ে নৌকা নিয়ে আসিছি’।
এছাড়া এনামুল হকের সমর্থক গোবিন্দপাড়া ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহেব আলীকে গত ১৪ ডিসেম্বর রুহিয়া মামুদপুর মোড়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় বাগমারা থানায় মামলা হয়। যা নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির তদন্তেও ধরা পড়েছে। এদিকে, এসব অভিযোগ পাওয়ার পর নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি আবুল কালাম আজাদের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা তলব করেন। ব্যাখ্যায় বেশিরভাগ অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন তিনি। তবে আচরণবিধি ভঙ্গ হয়ে থাকলে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন কালাম। তখন তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু এরপরও বার বার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে ধরা পড়েছে, কালামের উস্কানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি এবং উচ্ছৃংখল আচরণ সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভীতির সঞ্চার করেছে যা সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অন্তরায়। তাই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।