স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে এ বছর মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। টানা তাপদাহে ঝরেছে গাছের আম।
গেল সপ্তাহ দুই দফা হালকা ঝড়-বৃষ্টিও হয়েছে। এর প্রভাবেও ঝরেছে কিছু আম। তবে ঝড়-ঝঞ্ঝাসহ আবহাওয়ার নানা প্রতিকূলতায় গুটি অবস্থায় এভাবে কিছু আম ঝরে পড়ার ঘটনা ঘটে সব সময়ই। এরপরও যা অবশিষ্ট থাকে সেই আম রাজশাহীর চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বাজারজাত করা হয়। পুরো মৌসুমে প্রায় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হয় এ বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে।
মূলত এ ঝরে পড়া আমের বিক্রি দিয়েই শুরু হয় ‘আম বাণিজ্য’। এতে একদিকে ব্যবসার সূচনা হয় অন্যদিকে ঝরে পড়া কাঁচা আমেই মেটে ভোক্তাদের আগাম চাহিদা। এ কাঠফাটা গরমে শরীরকে সতেজ ও সজীব রাখতে কাঁচা আমের জুসের কোনো জুড়ি নেই। আর ফোড়নের পর ডালে কয়েক ফালি আম কেটে ছেড়ে দিলে স্বাদে-গুণে তা যেন অমৃত হয়ে ওঠে অনেকের কাছেই। আর যে কোনো গ্রীষ্মকালীন সবজিতে কাঁচা আমের সংমিশ্রণ সেই সবজিকে করে তোলে আরও অতুলনীয়, সুস্বাদু ও বৈচিত্র্যময়। যে কারণে এ সময় জুস বা সবজিতে কাঁচা আম পছন্দ করেন অনেক ভোজনরসিক মানুষই। এছাড়া আচার ও মোরব্বার জন্য এ সময়টায় রাজশাহী ও আশপাশের অঞ্চলে কাঁচা আমের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এজন্য প্রথম দিকে কাঁচা আমের দামও কিছুটা বেশি থাকে। তবে মৌসুম যত এগিয়ে আসে, দামও তত কমতে থাকে।
আর এবারও আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় গাছ থেকে ঝরে পড়ছে বিভিন্ন জাতের আমের গুটি। এর মধ্যে আগাম জাতের অনেক কাঁচা আমের ভেতরে আঁটি হয়ে গেছে। আর কিছু আমের আঁটি এখনও পরিপক্ব হয়নি। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কালবৈশাখী না হলেও খরতাপ ও হালকা ঝড়-বৃষ্টিতেই গাছের আম ঝরে পড়ছে। তাই রাজশাহী অঞ্চলের আমচাষিরা বাগানের ঝরে পড়া আম কুড়িয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। গরমের তীব্রতায় কাঁচা আমের জুসের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা ও ঔষধি গুণ থাকায় বাজারে এখন ঝরে পড়া এ কাঁচা আমের চাহিদাও বেড়েছে। তাই রাজশাহীর আশপাশের উপজেলা থেকে প্রতিদিনই আম আসছে। এদিকে বাজারে প্রতি বছর এমনিতেই নতুন আসা মৌসুমি ফলের প্রতি ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা থাকে। এর ফলে দামও কিছুটা বেশি। অন্য সময় ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় ঝরে পড়া কাঁচা আম। কিন্তু গেল কদিন থেকে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা আম বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারগুলোতে সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝমাঝি থেকে কাঁচা আম আসতে শুরু করে, এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে তেমন ঝড় না হওয়ায় এখনও সেভাবে আম সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। কালবৈশাখী ঝড় হলে প্রচুর পরিমাণে আম বাজারে আসবে। তখন কাঁচা আমের দাম আগের মতোই কমে যাবে।
নগরের সাহেববাজারে থাকা মাস্টার পাড়ার পাইকারি বাজার, জিরোপয়েন্ট বড় মসজিদের সামনে, রেলস্টেশন কাঁচা বাজার, শালবাগান বাজার ও নওদাপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গেল কয়েক দিন থেকে ঝরে পড়া কাঁচা আম বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া লক্ষ্মীপুর, কোর্ট বাজার ও কাটাখালি বাজারেও উঠছে বিভিন্ন জাতের কাঁচা আম। এর মধ্যে আঁটি জাতের আম, আশ্বিনা, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আমের গুটিও পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফজলি আম কাঁচা অবস্থায় মিষ্টি হওয়ায় এর চাহিদাই বেশি। বাকি আমগুলো কাঁচা অবস্থায় একটু টক বেশি হওয়ার এগুলোর দাম একটু কম।
দেখা গেছে মান ও জাত ভেদে কাঁচা আম এখন ২৫ থেকে ৩০ ও ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেবল ফজলি আম (মাঝারি) ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি করে চাইছেন অনেকে।
সাহেববাজারে কাঁচা আম নিতে আসা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন যে ফলই বাজারে আসুক তার প্রতি ক্রেতাদের একটু ঝোঁক বেশি থাকে। কাঁচা আমের প্রতিও এখন ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। গরমের তীব্রতায় প্রাণ জুড়াতে এক গ্লাস ঠাণ্ডা কাঁচা আমের জুসের কোনো তুলনা হয় না। এটি ভিটামিন সি এর কাজ করে। আরও অনেক গুণ তো রয়েছেই। তাই ছোট-বড় সবাই পছন্দ করেন। অনেকে আবার ডালের সঙ্গে আম দিয়ে টক করে রান্না করেন। তাই এ সময় কাঁচা আমের চাহিদা থাকে। তবে ঝড় বেশি হলে কাঁচা আমের সরবরাহ বাড়বে, দামও অনেক কমে যাবে। তিনি আজ ২৫ টাকা কেজি দরে কাঁচা আম কিনেছেন বলে জানান।
আর মাস্টারপাড়া বাজার এলাকার আম বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, তিনি গোদাগাড়ীর কদম শহর থেকে এসেছেন। গেল দুদিন হালকা ঝড়েই অনেক কাঁচা আম ঝরে পড়েছে। তাই এগুলো বাজারে এনে বিক্রি করছেন। আজ তার কাছে ফজলি আম রয়েছে। আর একটু বড় হওয়ায় প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। বাছাইয়ের পর যেগুলো ছোট সেগুলো নিচে পড়ে যায়। সেগুলোও ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করছেন। এ আমের জুস অনেক স্বাদ হওয়ায় চাহিদাও বেশি বলে উল্লেখ করেন এ আম বিক্রেতা।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এ বছর রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমির বাগানে ২ লাখ ৩০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে গত দুদিনে বেশ কিছু এলকায় হালকা ঝড় ও কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছু আম ঝরেছে। যদিও এতে উৎপাদনের কোনো ঘাটতি হবে না। চৈত্রের তাপদাহ ও বৈশাখ মাসের কালবৈশাখী ঝড়-ঝঞ্ঝা এগুলো রাজশাহীর পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে সয়ে গেছে। এমন প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করেই প্রতি বছর আম শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, বড় হয় এবং বাম্পার ফলনও হয়। রাজশাহীর চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশেই যায়। এবারও বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ভালো ফলনই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঊর্ধ্বতন এ কৃষি কর্মকর্তা।
আরবিসি/২৮ এপ্রিল/ রোজি