আরবিসি ডেস্ক: নওগাঁয় র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজধানীর মিরপুর ২ নং ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারে পল্লবী ও রূপনগর থানা বিএনপি আয়োজিত এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তার অভিযোগ, ‘‘আজকে কেউ বাদ যাচ্ছে না। আমরা শুধু বিএনপির লোকেরা নই, সাধারণ মানুষও বাদ যাচ্ছে না। নওগাঁর একজন মহিলা তিনি সরকারি কর্মচারীৃ কী কারণে তাকে র্যাব তুলে নিয়ে গেল এখন পর্যন্ত জানা যায় নাই এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সে নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করলো, তাকে মেরে ফেলা হল।
‘‘এখন তারা বলছে যে, এটা ভুল হয়েছে। এক মন্ত্রী বলছেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট- এটার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এই অপপ্রয়োগের ফলে একজন নিরাপরাধ অসহায় নারীর জীবন পর্যন্ত চলে গেল। এর দায় কে নেবে? এই দায় সম্পূর্ণ সরকারকে নিতে হবে।” এ আইনের আওতায় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে আটক, সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার সমালোচনাও করেন তিনি।
এ সরকারের আমলে আমার দেশের মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের আসাদ ও যায় যায় দিনের শফিক রেহমানকে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ফখরুলের অভিযোগ, “অসংখ্য সাংবাদিক ভাইদের ওপর নির্যাতন চলছে, হত্যা হয়েছে, মেরেও ফেলা হয়েছে।” তিনি বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন এবং সরকার হটাতে নেতাকর্মীদের ‘শৃঙ্খলাবদ্ধ’ হয়ে তারেক রহমানের নির্দেশ পালনের আহ্বান জানান।
পল্লবী থানা আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে ভাচুর্য়াল মাধ্যমে লন্ডন থেকে বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগমের কারণে সংবাদমাধ্যম কর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। একপাশে দাঁড়িয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের মধ্যে কয়েকজন কর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। মারমুখী কর্মীদের আক্রমণে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। পরে মঞ্চ থেকে নেতারা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বক্তব্যের শুরুতে এরকম ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তির একটা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত যে ঘটনা ঘটেছে সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করতে চাই এই রূপনগর, পল্লবী থানার নেতাকর্মীদেরকে আপনারা কী সত্যিকারই দলকে ভালোবাসেন? মনে হয় না।
“তাহলে আজকে এই ঘটনা ঘটতো না। আপনারা অতিথিদেরকে সম্মান করতে জানেন না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত, শোকাহত।“ এ ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “এখানে আওয়ামী লীগের দালালেরা ঢুকেছে, এখানে সরকারের দালালের এসেছে। আমি আবারও আমার সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে, দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাচ্ছি।”
এরপরও কিছু নেতাকর্মী হৈ চৈ শুরু করলে আবারও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এরা কারা? চুপ, থামো।“ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করবার জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য আবারও সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে তারা নিষিদ্ধ করে নাই কিন্তু রাজনৈতিক দলের কার্য্ক্রম তারা বন্ধ করে দিচ্ছে।
‘‘বিএনপিকে তারা বাইরে কোথায় কর্মসূচি করতে দিতে চায় না। আজকে যদি খোলা জায়গায় প্যান্ডেলে করতে পারতেন তাহলে এতো সমস্যা (প্রচণ্ড ভিড়) হতো না। কিন্তু বাইরে কর্মসূচি করতে দেয় না। তারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়, তারা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়।” ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এবার দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন।
ইফতারের আগে পল্লবী থানার প্রবীণ বিএনপি নেতা জহিরুল হকের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুব দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ইয়াছিন আলীসহ থানার নেতারা বক্তব্য রাখেন।
আরবিসি/০১ এপ্রিল/ রোজি