স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা মূলক আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আন্ত:ধর্মীয় সংলাপে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল, এমপি।
সভায় রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পৃথিবীর সকল ধর্মের মূলনীতি একই। তাই আন্ত:ধর্মীয় সংলাপের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি সুদৃঢ় করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। একটি গোষ্ঠি ধর্মকে টেনে এনে রাজনীতি করে এ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে। তাদের এ উদ্দেশ্য সফল করতে দেওয়া হবে না।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। জাতির পিতা সর্বপ্রথম বাংলাদেশের সংবিধানে এই মূলনীতি সন্নিবেশিত করে গেছেন। তাই দেশের অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রাখতে আন্ত:ধর্মীয় সংলাপ সর্বক্ষেত্রে চর্চা করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যকার আন্ত:ধর্মীয় সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা.) এর জীবনী থেকে আমরা অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার কথা জানতে পারি। এই বিষয়টি মসজিদের খতিব ও ইমামগণ জুমার বয়ানে নিয়মিত ভাবে তুলে ধরতে পারেন। এছাড়াও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আলোচনা করতে হবে। তবেই সম্প্রীতির, সোনার বাংলা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ধর্মভিরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নই। ধর্মকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সকলে বুঝতে পারেন। পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহনশীলতার চর্চা বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো অশুভ শক্তি যেন রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, আরএমপি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (নগর বিশেষ শাখা) মুহম্মদ আব্দুর রকিব, বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার, পবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো ইয়াসিন আলী, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু, মোহনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. আব্দুস সালাম, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও লসমী চাকমা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. রেজ্জাকুল হায়দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট রাজশাহী কার্যালয়ের ট্রাস্টি শ্রী তপন কুমার সেন, সোনালী সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক মো. লিয়াকত আলী, সোনার দেশ পত্রিকার সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত।
এ সময় উপস্থিত বক্তারা দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি ও সুসংহত করতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, সম্প্রীতির বাংলাদেশ অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং আগামীতেও থাকবে। কোন গোষ্ঠীকে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে এ আন্ত:ধর্মীয় সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই জেলার পাশাপাশি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও এ সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
উক্ত সংলাপে রাজশাহী জেলার পুলিশ-প্রশাসন, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সংস্কৃতি কর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করে।
আরবিসি/১৪ মার্চ/ রোজি