স্টাফ রিপোর্টার : স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধের পর এবার আগুন জ্বালিয়ে রেলপথ অবরোধ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার (১২ মার্চ) রাত পৌনে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের রেলপথে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিভিন্ন ব্যানার এনে রেললাইন দুই পাশে আগুন জালিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা বিশাল আকৃতির ময়ূর এনে সেখানে আগুন জ্বালাতে দেখা যায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। আমাদের শতাধিক ভাই আহত হয়ে মেডিকেল ভর্তি আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। গতকালের ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কাউকেই পাশে পাইনি। প্রক্টরের পদ কেন রাখা হয়েছে। পুলিশকে গুলি করার হুকুম কে দিয়েছে? প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বাসের ভেতর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের ধরে সহপাঠীরা বিনোদপুর বাজারে চালক ও হেলপারকে মারধর করেন। বাস থেকে চালককে নামিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এতে বাধা দিলে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বিরোধ দেখা দেয়। এরপর রাতভর দফায় দফায় স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় রাতে ক্যাম্পাসে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ এনে শনিবার সকালে ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপাচার্যকে উদ্ধার করে সেখান থেকে বাসভবনে পাঠিয়ে দেন।
দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিকেলে ফের বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ বেশ কিছু দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুসংখ্যক এলাকাবাসীর অপ্রীতিকর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মর্মাহত। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় বিনোদপুর গেট সংলগ্ন স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় এবং এতে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করার ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এলাকাবাসী ও পুলিশের কতিপয় সদস্যের এসব কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের কাছে যেসব দাবি উত্থাপন করেছে, সে বিষয়ে উপাচার্য সংবেদনশীল এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে স্থানীয় মতিহার থানায় এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিক্ষার্থী বিনোদপুর ও আশপাশের মেসে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর আছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাবি প্রশাসন মেস মালিক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে। কর্তৃপক্ষ মনে করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। তাদের পরামর্শ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। অতীতে এ রকম পরিস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমান এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের শান্ত থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার আহ্বান জানায়।
আরবিসি/১২ মার্চ/ রোজি