• শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

উত্তাল ক্যাম্পাসে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি

Reporter Name / ২৮৩ Time View
Update : রবিবার, ১২ মার্চ, ২০২৩

আরবিসি ডেস্ক : ফের উত্তপ্ত দেশের তিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার উত্তাপ শেষ না হতেই স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। চারুকলা বিভাগ নিয়েও উত্তাপ ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে রোববার (১২ মার্চ) প্রক্টরসহ ১৭ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এসব ঘটনায় দৃষ্টি এখন সরকারের সর্বোচ্চ মহলের। কেন এমন হচ্ছে সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কর্তাব্যক্তি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

কয়েকজন উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে এসব ঘটনায় সূক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি যেন শান্ত থাকে সেদিকে উপাচার্যদের নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ বছর নির্বাচনী বছর। নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাস অশান্ত করতে নানা গোষ্ঠীর অপতৎপরতা থাকবে। ক্যাম্পাসে উত্তাপ ছড়ানোর পাশাপাশি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোরও একটা চেষ্টা থাকবে। তাই তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি রাজশাহী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তুচ্ছ ঘটনা বড় আকারে রূপ নিয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে কি না তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। কারণ, এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ছাত্রশিবিরের দখল ও আধিপত্য ছিল। পরিস্থিতির কারণে সংগঠনের কার্যক্রম আড়ালে চলে গেলেও এসব ঘটনার সুযোগ নিয়ে তারা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ দেশের তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়েছে। এর পেছনে কি শুধুই শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ নাকি অন্য কোনো শক্তি কাজ করছে তা সরকারকে অবহিত করতে ভিসিদের বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞাপন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করে দেশের কয়েকটি ক্যাম্পাসের অপ্রীতিকর ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। যেভাবে হোক এসব ঘটনার প্রভাব অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে পড়ে। তাই আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি। যাতে তৃতীয় পক্ষ কোনো সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজ বেগম বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট উপাচার্যদের এ ধরনের ঘটনা এড়াতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুর গেট এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে ফের উত্তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। শনিবার (১১ মার্চ) এ সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। বিনোদপুর গেট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও আগুন দিয়ে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় আহত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন।

এরপর রোববার প্রায় তিন ঘণ্টা উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে সিনেট ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্রলীগের সহায়তায় তিনি সেখান থেকে বের হয়ে তার বাসভবনে যান। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা।

এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। মারধর, হামলা ও গুরুতর জখম করার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নবীন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুনকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ঘটনায় এক মাস ধরে উত্তাল ইবি ক্যাম্পাস। বিষয়টি বিচার বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। তোলপাড় করা এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী চার ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে ছাত্রলীগ থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামসুল আলমকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে ইবি কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনার মধ্যেই নিয়োগ নিয়ে উপাচার্যের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। এরপর তার অফিস রুমে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর আরও দুটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। এ কারণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা, প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদের তিনটি নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সভা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ফুলপরী ও উপাচার্যের অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনা আড়াল হলেও ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি।

শাটল ট্রেনে সিটে বসার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ যেন যুদ্ধংদেহি মনোভাব। এসব দ্বন্দ্ব কি দলীয় স্বার্থে, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো শক্তি রয়েছে— এমন প্রশ্ন ছাত্রলীগের মধ্যে। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাসের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হচ্ছে তেমনি ছাত্রলীগের রাজনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

চবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গত এক মাসে ক্যাম্পাসেই বেশ কিছু আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের সংস্কার আন্দোলনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টায় শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক তিন গ্রুপের (আ জ ম নাছির, নওফেল ও বিজয় গ্রুপ) মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জনের বেশি আহত হয়।

২৪ ফেব্রুয়ারি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে চবি ছাত্রলীগের বিজয়ের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। উভয়পক্ষের ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও ভাঙচুর করা হয় সোহরাওয়ার্দী হলের ৮টি কক্ষ। ২৩ জানুয়ারি চবি উপাচার্যের সভাকক্ষে প্রভাষক পদে ভাইভা দিতে আসা এক শিক্ষক প্রার্থীকে মারধর করে ছাত্রলীগের উপগ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেসের (ভিএক্স) কর্মীরা। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের কক্ষ ভাঙচুর ও শাটল ট্রেন আটকে রাখার অভিযোগও উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে।

৩০ জানুয়ারি পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ায় চবি উপাচার্যের কক্ষ ভাঙচুর ও শাটল ট্রেন আটকে রাখার অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের বিরুদ্ধে।

এদিকে, তদন্ত কমিটি করেই এসব ঘটনায় দায় সারে প্রশাসন— এমন অভিযোগ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি আর প্রতিবেদন জমা দেন না। তবে শিক্ষকরা বলছেন, এ ক্যাম্পাস ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি। এসব ঘটনার নেপথ্যে কি শুধুই ছাত্রলীগ নাকি অন্য কেউ তা খতিয়ে দেখতে হবে।

আরবিসি/১২ মার্চ/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category