স্টাফ রিপোর্টার : শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের এবারের আসরে অংশ নেওয়া রাজশাহীর ১১ জন খেলোয়াড়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশকে পেটানোর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে কোচকেও। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অপ্রাপ্তদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার ১১ খেলোয়াড়ের মধ্যে তিনজন ছেলে ও আটজন মেয়ে। তাদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের বেশি। তাঁরা হলেন, আলী আজম (১৯), আকাশ আলী মোহন (২০), রিমি খানম (১৯), পাপিয়া সারোয়ার পূর্ণিমা (১৯), মোছা. দিপালী (১৯) ও সাবরিনা আক্তার (১৯)। অন্য পাঁচজনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার কোচের নাম আহসান কবীর (৪৫)।
মামলায় এই ১২ জন ছাড়াও মো. রমজান (১৯) নামের আরেক খেলোয়াড়কে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এই খেলোয়াড়েরা জুডো, কুস্তি, কারাতেসহ বিভিন্ন খেলা খেলেন। রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় তাদের বাড়ি। তাদের বিরুদ্ধে একজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো এবং তাঁর স্ত্রীর চেইন চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে।
যে পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গে মারামারির অভিযোগ তার নাম গোলাম কিবরিয়া (৩০)। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী খেতুর গ্রামে তার বাড়ি। কিবরিয়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কর্মরত।
জানা যায়, রবিবার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা জয়াকে নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গোলাম কিবরিয়াকে মারধর করা হয়। এরপর রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশ সবাইকেই থানায় নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর সন্ধ্যায় গ্রেফতার ১২ জনকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন স্বজনেরা। সন্তানদের জন্য তাঁরা আহাজারি করেন। তখন তাদের হাতে খেলোয়াড়দের পরিচয়পত্র এবং মেডেল দেখা যায়।
গ্রেফতার হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক মেয়ে খোলোয়াড়ের চাচা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভাতিজিসহ এইসব খেলোয়াড়রা ঢাকায় যুব গেমস খেলতে গিয়েছিল। খেলে পুরস্কার পেয়েছে। খেলা শেষে তারা ট্রেনে আসছিল। তাদের সবার ২৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ছিল একটি লাগেজে। ট্রেনে সেটি খুঁজে পাচ্ছিল না। তখন তারা ট্রেনে লাগেজটি খুঁজছিল। ওই সময় সিভিলে থাকা পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে এক মেয়ে খেলোয়াড়ের কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে ওই পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে থাপ্পড় মেরে বসে। এছাড়া আরেক ছেলে খেলোয়াড়কেও মারে। পরে স্টেশনে তাদের আবারও হাতাহাতি হয়। এরপরই পুলিশ দুইপক্ষকে মীমাংসার নামে থানায় আনে। পরে মামলা করা হয়।’
মারামারিতে পুলিশ সদস্য গোলাম কিবরিয়ার নাক ফেটে গেছে। তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মামলায় তাঁর স্ত্রী দাবি করেছেন, স্বামীকে মারধরের সময় তাঁর গলার চেইন চুরি করে নেওয়া হয়েছে। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে কিবরিয়ার ভাই গোলাম সারওয়ার এবং সারওয়ারের বন্ধু সাব্বির ইসলামকে। গোলাম সারওয়ার দাবি করেন, ট্রেনের ভেতরে কোনো ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থেকে আগে নামাকে কেন্দ্র করে স্টেশনে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাঁর ভাইয়ের নাক ফাটানো হয়েছে।
রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি গোপাল কুমার বলেন, এতগুলো খেলোয়াড়কে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর সাহস তাঁর নেই। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মামলা নিয়েছেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোচ এবং খেলোয়াড়দের আদালতে পাঠিয়েছেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
আরবিসি/০৫ মার্চ/ রোজি