• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন

দিল্লিতে গিয়ে যেসব প্রস্তাব দিলেন মোমেন

Reporter Name / ৯৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩

আরবিসি ডেস্ক: ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বুধবার (১ মার্চ) দিল্লিতে তার সফরের প্রথম দিনেই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করেছেন। যা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
ভারতের সাবেক কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করছেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে এমন ‘কঠোর বার্তা’ দেওয়ার নজির খুব কমই আছে। তাদের কেউ কেউ এমনও মনে করছেন, বাংলাদেশ আসলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যকার কিছু কিছু ‘অপ্রিয় সত্যে’র প্রতিই দিক নির্দেশ করেছে।

দিল্লির শীর্ষস্থানীয় স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনে (ভিআইএফ) বুধবার সন্ধ্যায় যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার মধ্যে রয়েছে -দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ পৃথিবীর অন্য যেকোনও অঞ্চলের চেয়ে কম। এই বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য বাধা বা ব্যারিয়ারগুলো দূর করতে হবে। ‘একটা দেশ হঠাৎ করে খেয়াল-খুশি মতো আরেকটা দেশের ওপর ট্যারিফ বা নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ার বসিয়ে দিয়ে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে ব্যাহত করলো, এভাবে তো চলতে পারে না। বরং এক দেশ যাতে অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে পারে, তার জন্য সব পারস্পরিক বিধিনিষেধ দূর করতে হবে’, বলেছেন তিনি।

‘আমাদের এই অঞ্চলের ভূগোলই আসলে এই নিয়তি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে প্রাকৃতিক সম্পদকে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে হবে–যার মধ্যে নদীর জলও আছে। এখানে একটি দেশ কিছুতেই অন্য একটি দেশকে তার ন্যায্য হিসসা থেকে বঞ্চিত করতে পারে না’, আরেকটি প্রস্তাবে বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কোনও দেশ যাতে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে অন্য দেশের মানুষকে চটিয়ে না ফেলে, সে দিকেও যত্নবান হওয়ার কথা বলেছেন এ কে আবদুল মোমেন। তার কথায়, ‘আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোনও দেশ তাদের ঘরোয়া রাজনীতির ইস্যুগুলোকে দিয়ে অন্য দেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক মানুষের ভাবাবেগকে না আহত করে ফেলে!’ এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরতে গিয়ে তিনি কোনও দেশের নাম করেননি ঠিকই-কিন্তু এর মাধ্যমে তিনি যে মূলত ভারতকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন, তা নিয়ে পর্যবেক্ষকদের কোনও সংশয় নেই।

কারণ এটাও খুব ভালো করে জানা যে গত কয়েক বছরের ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সোনালি অধ্যায়ের যুগেও এই অস্বস্তিকর ঘটনাগুলো ঘটেছে- মাস দুয়েক আগেই ভারত বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের ওপর আরও পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য অত্যন্ত চড়া হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি বসিয়েছে। গত কয়েক বছরে একাধিকবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ বা গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের রফতানি হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ভারত সেখানে কোনও আগাম নোটিশ দেওয়ারও ধার ধারেনি।

প্রায় এক যুগ হতে চলল তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে দু’দেশের মধ্যকার চুক্তির খসড়া তৈরি হয়ে আছে, কিন্তু ভারত এখনও তা সই করার জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। দেশের ভেতর রাজনৈতিক মতবিরোধের কথা বলে ভারত তিস্তা চুক্তিকে অনির্দিষ্টকালীনভাবে পিছিয়ে রেখেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদীর বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই ভারত যেহেতু উজানের দেশ, তাই ভাটির দেশ বাংলাদেশকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে, এ অভিযোগ বারবার উঠেছে।

ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গরুর মাংস বহন করার জন্য মুসলিমদের পিটিয়ে মারা বা নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। আসামে এনআরসি অভিযানের নামে বাঙালি মুসলিমদের নিশানা করা হচ্ছে কিংবা বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করার মধ্যে দিয়ে ভারত সরকার মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনার নীতি নিয়ে চলছে, এমন ধারণাও সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এগুলো যদিও ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা মাথায় রেখে করা, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও তা বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ভাষণে এই প্রসঙ্গগুলোর সরাসরি উল্লেখ করেননি ঠিকই, কিন্তু প্রস্তাবের আকারে যে কথাগুলো বলেছেন তাতে তিনি কী ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয় না। বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনে এ কে আবদুল মোমেনের ভাষণ শুনতে উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন সাবেক শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় কূটনীতিবিদ এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, ‘এই বিষয়গুলো যে গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তি বয়ে আনছে, সেটা অজানা নয়। আমি যতদূর জানি, ইদানিংকালে শীর্ষ পর্যায়ের নানা বৈঠকে বাংলাদেশ এই কথাগুলো ভারতকে বলেও আসছে। এখন পার্থক্য হলো, মোমেন সাহেব এবারে দিল্লিতে এসে প্রায় প্রকাশ্যেই সেগুলো বললেন এবং একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিলেন।’

বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা ও ভারতের সাবেক ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অরিবন্দ গুপ্তাও এসব প্রস্তাব তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, এগুলোর রূপায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও সম্প্রীতি অবশ্যই বাড়বে। সভার প্রশ্নোত্তর পর্বে দিল্লিতে ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার এক সাংবাদিক আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির কথিত পুনর্বিবেচনা নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। যার জবাবে এ কে আবদুল মোমেন শুধু বললেন, ‘বিষয়টা আমার তেমন ভালো জানা নেই।’

আরবিসি/০২ মার্চ/ রোজি

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category