আরবিসি ডেস্ক : দেশের চাহিদার সিংহভাগ ফুল সরবরাহ করেন যশোরের গদখালির চাষিরা। প্রতিবছরের মতো এবারও আসন্ন বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে দেশব্যাপী প্রিয়জনের মন রাঙাবে যশোরের গোলাপ-জারবেরা-রজনীগন্ধা ফুল।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরেও সারাদেশে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গদখালি এলাকার ফুলচাষিরা।
এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। বিশেষ দিবসগুলো ঘিরে চাঙ্গা হয়েছে ফুলের বাজার। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। আসন্ন এই তিন দিবসে ৫০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির টার্গেট চাষিদের।
চাষিদের প্রত্যাশা, করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষতি এবারই পুষিয়ে নিতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, করোনা ভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পান এই অঞ্চলের ফুল সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। গতবছর বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘিরে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছিল।
এর আগের দুই বছর চাষিরা কোনো ফুলই বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফুল চাষের জমি যেমন বেড়েছে, তেমনি উৎপাদনও হয়েছে ভালো। একইসঙ্গে বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় আশা করা হচ্ছে, বেচাকেনা গত বছরের দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে চাষিরা ফুলক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রয়োজনমাফিক পানি দেওয়া, স্প্রে করা, আগাছা নিড়ানো, মরা-রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলাসহ ক্ষেত পরিচর্যায় তাদের দম ফেলবার ফুসরত নেই। পাশাপাশি ক্ষেত থেকে ফুল তুলে নিয়ে ছুটছেন গদখালি ফুলবাজারে। দূর-দূরান্তের ক্রেতারাও হাজির হচ্ছেন সেখানে।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণা আর হাঁক-ডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন শত শত ফুলচাষি। কেউ ভ্যান, কেউ বাইসাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ফুলের দাম নিয়ে হাঁক-ডাকে ব্যস্ত।
ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছেন এই বাজার থেকে। একইসঙ্গে বেশি দাম পাওযায় ফুলচাষিরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছেন। সবমিলিয়ে ফুল-বেচাকেনা জমে উঠায় ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি শওকত গাজী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতিতে ফুলচাষিরা খুশি।
ফুলক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, চাষিদের এখন দম ফেলার ফুসরত নেই। শেষ মুহূর্তে ক্ষেত পরিচর্যা করে ফুল ধরে রেখে বাজারে তুলতে হবে। ফুলের মান ভালো থাকলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।
এদিকে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৮-১০ টাকা, গ্ল্যাডিওলাস ফুল রং ভেদে ৮-১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১০-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চন্দ্রমল্লিকা ৩ থেকে ৪ টাকায়, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফুলচাষি ও বিক্রেতাদের ধারণা, এখন যে দামে ফুল বিক্রি হচ্ছে, দুই দিন আগে থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সারাদেশ থেকে পাইকাররা আসছেন। ফলে বসন্ত দিবস ও ভালোবাসা দিবসে ভালো দাম পাবেন ফুলচাষিরা।
যশোরের ঝিকরগাছার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ঝিকরগাছার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং যথাসময়ে শীত পড়ায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণও অনেক কম। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
আরবিসি/১২ ফেব্রুয়ারি/ রোজি