• শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ অপরাহ্ন

রাবিতে অনুষ্ঠান চলাকালে হামলা প্রতিবাদে মানববন্ধন

Reporter Name / ৯৯ Time View
Update : রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠান চলাকালে হামলা ও চেয়ার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিভাগটির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আয়রিন নুপুর নামের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গত শনিবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে এই হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে রোববার বেলা ১১টায় সিরাজী ভবনের সামনে মানববন্ধনও করেছে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে, শনিবার হামলা চালানোর সময় ঘটনাস্থলেই হামলাকারীদের মধ্যে দুই শিক্ষার্থীকে ধরে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অফিস কক্ষে নিয়ে গেলে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া তাদেরকে জোড় করে নিয়ে চলে যায়।

ফোকলোর বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, এই হামলাটি ‘পরিকল্পিতভাবে’ ছাত্রলীগের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের এক শিক্ষকের সম্পৃক্ততা আছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে অভিযুক্ত সেই শিক্ষক বলছেন, এই হামলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনলে এর সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাঙচুরকারী ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমিক রহমান অরণ্য ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিক। তারা দুজনেই রাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠান চলাকালে কোনো কারণ ছাড়াই পেছনের দর্শক সাড়িতে থাকা প্লাস্টিকের চেয়ার ভাংচুর করতে থাকে কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের একজনকে ঘটনাস্থল থেকে এবং আরেকজনকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে থেকে ধরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে অবস্থিত ফোকলোর বিভাগের অফিসে শিক্ষকদের কাছে নিয়ে যায়।

জানতে চাইলে হামলার এই ঘটনাটিকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ উল্লেখ করে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শবিবার বিকেলে আমরা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে আমাদের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ ও প্রবীনদের বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। অনুষ্ঠান চলাকালে আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরুর সময় কোন কারণ ছাড়াই কয়েকজন মিলে পেছনের দর্শক সাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তখন ভাঙ্চুরকারী দুজনকে পরিচয় জানতে বিভাগে আনা হয়। কিন্তু তার আগেই ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া এসে প্রক্টর অফিসে নেয়ার নাম করে তাদের বের করে নিয়ে যান। অথচ তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সহযোগী প্রক্টর সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, এই অনুষ্ঠানের আগের দিন নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক হাশেম উদ্দিন (সুখন সরকার) আমাদের এক সহকর্মীকে এখানে অনুষ্ঠান না করার জন্য বলেন। কারণ এটা তিনি তার নিজস্ব সংগঠন ‘সংস্কৃতায়নের’ জন্য বরাদ্দ নিয়েছেন এবং মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন বলে জানান। তাই অন্য কেউ এখানে অনুষ্ঠান করতে পারবে না। কিন্তু আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠান করেছি। এমনকি পূর্বেও এখানে কয়েকবার অনুষ্ঠান করেছি। এই হামলার ঘটনায় আমাদের একজন নারী শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে। পরে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আমরা এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিচারের দাবি করছি।

কিছুদিন আগে একই স্থানে অভিযুক্ত সেই শিক্ষকের অনুমতি ছাড়াই ‘কুয়াশা উৎসবের’ আয়োজন করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন উৎসব সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাশেম উদ্দীন বলেন, আমি নিজেও একজন সংস্কৃতি কর্মী। একজন সংস্কৃতি কর্মী হয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাঁধা প্রদান করব, এমনটা হতে পারেনা। তবে আমি বলেছি অনুষ্ঠানটি যদি অন্য জায়গায় করা যায়, তাহলে আমাদের জন্য সহযোগিতা হতো। কারণ সেখানে আমাদের সবসময়ই প্রোগ্রাম হয়। সে জায়গায় যদি খানাখন্দ করা হয় তাহলে সেটি আমাদের জন্য সমস্যার।

হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে কারা সেখানে হামলা করেছে তাদের আমি চিনিই না। আর তাদেরকে ধরার পরে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? তাদেরকে ধরে আইনের আওতায় আনলেই এর সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।
ভাঙচুরের বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সৌমিক জানান, অনুষ্ঠান চলাকালীন আমরা কয়েকজন পিছনে বসেছিলাম, সেখানে একজন শিক্ষার্থী আমাকে মারে। এই নিয়ে হট্টগোল বাঁধে এবং কিছু চেয়ার ভাঙচুর হয়। তখন কয়েকজন ধরে আমাকে ফোকলোর বিভাগের নিয়ে যায়।
ভাঙচুরকারীদের বিভাগ থেকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা প্রক্টরিয়াল বডি কোনো শিক্ষার্থীকে আটকে রাখার অধিকার রাখে না। তাছাড়া ফোকলোর বিভাগে গেলে আমাকে অপদস্ত করা হয়। তবে আমি বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসি। যদি এ ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে প্রক্টর দপ্তরে তাদের নিয়ে আসব। আর এই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কেউ যদি এ বিষয়ে অভিযোগ তুলে থাকে, তাহলে সেটা ভিত্তিহীন। শিক্ষকদের থেকে এরকম অভিযোগ অত্যন্ত দুঃখজনক।

অনুমতি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ফোকলোর বিভাগ আমাদের অনুমতি নিয়েই সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেই অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনায় একজন শিক্ষককে নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো জায়গায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে কেউ বাঁধা প্রদানের অধিকার রাখে না। হয়ত ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে নিজের সংগঠনের জন্য সেটি ব্যবহার করতে পারে। আমরা সেই জায়গাটিকে কোনো সংগঠনের জন্য বরাদ্দও দেইনি।

আরবিসি/১২ ফেব্রুয়ারি/ রোজি


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category