আরবিসি ডেস্ক : ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি পদে এই প্রথম পাবনা জেলার কেউ দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
রোববার (১২ ফেব্রয়ারি) সকালে খবর প্রকাশ হওয়ার পর পরই পাবনার মানুষের বাঁধভাঙ্গা আনান্দ উল্লাসে মাতেন। পাবনার এই কৃতিসন্তানের এমন অর্জনে গর্বিত জেলার বাসিন্দারা। তারা আনন্দ মিছিল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণও করেছেন।
জানা গেছে, সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রথম পেশা ছিল সাংবাদিকতা। বাংলার বাণী পত্রিকার পাবনা জেলা প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। এর আগে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসাবে রাজনীতি করেছেন। ১৯৭০ সালে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৭২ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ তথ্য দিয়ে পাবনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আলী মুর্তজা বিশ্বাস সনি বলেন, ১৯৭৪ সালে শেখ মনির অনুরোধে বঙ্গবন্ধু সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি করেন। তিনি বরাবরই পাবনার মানুষের জন্য উন্নয়নমূলক চিন্তা ও কাজ করেছেন। তার মতো ব্যক্তির মনোনয়ন পাওয়া পাবনার যুবলীগ গর্বিত ও আনন্দিত।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, একজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতা থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায় সেটি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দেখিয়ে দিয়েছেন। উনি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক। তিনি জীবন্ত ডায়েরি। জীবনে অনেক কিছু শেখার আছে তার কাছ থেকে। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাষ্টের সর্বোচ্চ সম্মান পেতে যাচ্ছেন।
পাবনা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ছোট-বড় সবার সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করতেন। তিনি নিজের চিন্তা না করে এলাকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করতেন। সব সময় পাবনাসহ দেশের উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন। সর্বোপরি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে যোগ্য এবং প্রাপ্ত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে।
পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.স.ম আব্দুর রহিম পাকন বলেন, একজন সাদাসিধে মানুষ সাহাবউদ্দিন চুপ্পু। সর্বস্তরের মানুষের কাছে একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি তাকে।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি পদে তিনি মনোনয়ন পাওয়ায় পাবনার সাংবাদিকরা গর্বিত। সাহবুদ্দিন চুপ্পু এক সময়ে সাংবাদিকতা করতেন। সাংবাদিক থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ায় খুবই আনন্দের ব্যাপার।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়ন পাওয়ায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তার সহপাঠী ও বন্ধুরা। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাবনার বিশিষ্ট সমাজসেবক মোক্তার হোসেন বলেন, একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি আমরা। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছি একসঙ্গে। আমি জানি চুপ্পু কতটা উদার ও ভালো মনের মানুষ। তিনি সব সময়ই দেশ ও মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। তাকে রাষ্ট্রপতিতে মনোনয়ন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানা গেছে, মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের শিবরামপুর মহল্লার জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী ও মাতা খায়রুন্নেসা। তিনি পাবনা শহরের পূর্বের গান্ধি বালিকা বিদ্যালয় ও রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে প্রাথমিকের পাঠ চুকান। পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি ও ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২সালে) বিএসসি পাস করেন।
পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন-পেশায় যোগ দেন এবং ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর পরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। যাতে হত্যা,ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন তিনি।
২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো.সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিন চুপ্পু পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনেরও সভাপতি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে সাহাবুদ্দিন চ্প্পুকে সামরিক আইন বলে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তিন বছর কারাভোগের পরমু ক্ত হলে তিনি পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের কথিতপদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্যভূমিকা পালন করেন।
১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ কন্যা ড. রেবেকা সুলতানার সঙ্গে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। রেবেকা সুলতানা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম-সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান।
চুপ্পু-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো.আরশাদ আদনান (রনি) দেশে ও বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদে কর্মরত আছেন।
আরবিসি/১২ ফেব্রুয়ারি/ রোজি