আরবিসি ডেস্ক: ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা ৫০০০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাপক বিপর্যয়ে ত্রাণ প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে রক্ষা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন; ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকায় মঙ্গলবার এমন হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুর্কি শহর আন্তাকিয়ায় ১০ তলা একটি ভবন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জরুরি কর্মীদের একটি উদ্ধার কাজ চালাতে দেখেছেন রয়টার্সের একজন প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক। শহরটিতে বিদ্যুৎ নেই, জ্বালানিও নেই। এরমধ্যে বৃষ্টি পড়তে শুরু করায় তাপমাত্রা নেমে হিমাঙ্কের কাছাকাছি চলে যায়।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পটিতে তুরস্ক ও প্রতিবেশী সিরিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এতে বহু অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ধসে পড়ে, হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত ও গৃহহীন হয়ে পড়ে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এএফএডি) জানিয়েছে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে সিরিয়ার সরকার ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের উদ্ধারকারী পরিষেবাগুলো দেশটিতে নিহতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। ১১ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে সিরিয়া আগে থেকেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, এখন ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।
তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যাওয়ায় রাতে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারমধ্যেই তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হতাইয়ে একরাশ ধ্বংস্তূপের নিচে আটকা পড়া এক নারীর কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল, সাহায্য চেয়ে ডাকছিলেন তিনি। কাছেই প্রাণহীন এক শিশুর দেহ পড়ে আছে। ই নিরাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে নিজেকে দেনিজ বলে পরিচয় দেওয়া স্থানীয় এক বাসিন্দা বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন, হতাশায় হাত মোচড়াচ্ছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “তারা আওয়াজ করছে, কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি, আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। ও আল্লা, তারা ডাকছে। তারা তাদের বাঁচাতে বলছে, কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। কীভাবে আমরা তাদের বাঁচাবো? সকাল থেকে এ পর্যন্ত এখানে কেউ আসেনি।” রাস্তায় লাইন দিয়ে দাঁড় করানো গাড়িগুলোতে বহু পরিবার ঘুমিয়ে ছিল।
আন্তাকিয়ার উত্তরে কাহরামানমারাসে বেঁচে থাকা পরিবারগুলো নিজেদের কম্বলে মুড়িয়ে আগুনের চারপাশে জড়ো হয়েছিল। এখানে নিজের চার সন্তান নিয়ে গাদাগাদি করে বসে থাকা নেসেত গুলার বলেন, “আমরা একটা বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যে আছি। আমরা ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত। পরিস্থিতি শোচনীয়।” আঙ্কারা ‘চতুর্থ মাত্রার বিপদসঙ্কেত’ ঘোষণা করেছে, তাতে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে; কিন্তু তারা জরুরি অবস্থা জারি করেনি। জরুরি অবস্থা জারি করলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সামরিক বাহিনী নামাতে হতো।
এএফএডির কর্মকর্তা ওরহান তাতার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ৫৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে, এ পর্যন্ত ২৮৫টি পরাঘাত হয়েছে এবং সবকিছু মিলিয়ে ২০৪২৬ জন আহত হয়েছেন। তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও তিন লাখ কম্বল দুর্গত এলাকাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
আরবিসি/০৭ ফেব্রুয়ারি/ রোজি