স্টাফ রিপোর্টার : প্রায় মাসব্যাপী কর্মব্যস্ত ছিলেন রাজশাহীর বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসমাবেশকে কেন্দ্র করেই তাদের এই কর্মব্যস্ততা। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাওয়ার আশায় দীর্ঘ একমাস ধরে শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, নগরবাসীও ছিলেন অধীর অপেক্ষায়। অবশেষে রবিবার তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়।
এদিন দিনের আলো ফুটতে না ফুটতেই বরেন্দ্র নগরী রাজশাহীতে শুরু হয় মানুষের আনাগোনা। জনসভা দুপুর আড়াইটায় শুরু হলেও ভোর বেলা থেকে মাদ্রাসার মাঠের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এসে জময়েত হন কর্মী ও সমর্থকরা। ট্রেন, বাস, নৌকা, রিক্সা, অটো, হিউম্যান হলার, এমনকি ট্রাকে চেপেও এসেছেন তারা। যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেও আশপাশের এলাকা থেকে এসেছেন এখানে।
অনেকে আগের দিনে এসে রাজশাহীতে ছিলেন। অনেক নেতাকর্মী সারারাত না ঘুমিয়েই অপেক্ষায় ছিলেন সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য। রবিবার বেলা বাড়তেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক মাদ্রাসার মাঠের আশপাশের এলাকাগুলো। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে এসব জায়গায় জড়ো হন এবং মুহুর্মুহু স্লোগানে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনসভার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাতটি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। এসব ট্রেন রবিবার সারাদিন রাজশাহী-নাটোর, রাজশাহী-জয়পুরহাট, রাজশাহী-সান্তাহার, রাজশাহী-ঢালারচর ও রাজশাহী-সিরাজগঞ্জ রুটে চলাচল করে। দুপুর ১২টার দিকে এসব ট্রেন রাজশাহীতে এসে পোঁছায়। এতে লক্ষাধিক মানুষে পূর্ণ হয়ে ওঠে রাজশাহী নগরী। কানায় কানায় ভরে ওঠে মাদ্রাসার মাঠ।
মাঠে জায়গা না পেয়ে লাখো মানুষ মাদ্রাসার মাঠের আশপাশের পাঠানপাড়া, পদ্মারপাড়, ফায়ারসার্ভিস মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষদের সুবিধার জন্য পয়েন্টে পয়েন্টে কয়েকটি এলইডি স্ক্রিন ও সাউন্ড সিস্টেম বসানো হয়। এসব স্ক্রিনেও প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন অপেক্ষমান রাজশাহীবাসী ও বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন এই মাদ্রাসার মাঠে। দীর্ঘ ৫ বছর পর আবারও নিজেদের শহরে প্রিয় নেত্রীকে দেখতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ের বাসিন্দা হনুফা বেগম। তিনি বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রী যখন এসেছিলেন তখন আমি তাকে দেখতে পেয়েছি। এইবারও দেখতে পাইলাম। খুব ভালো লাগছে।
পদ্মানদীর ওপারে সীমান্ত ঘেঁষা চর মাঝারদিয়ার, চর খানপুর ও চর খিদিরপুর। এসব দুর্গম চর থেকেও নৌকাযৌগে মানুষ এসেছেন জনসভায় যোগ দিতে। চর খিদিরপুর থেকে এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব নাসিরউদ্দীন। নৌকায় চড়ে নেমেছেন ঘাটে। তারপর লাঠিতে ভর করে এসেছেন মাদ্রাসার মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়। এত কষ্ট করে কেন এলেন, জানতে চাইলে স্মিত হেঁসে বলেন, জীবনে অনেক জনসভা দেখেছি, কিন্তু এত মানুষ দেখিনি বাপ। শেখের বেটিকে দেখবো বুইলে অনেক কষ্ট করে ওপার থেকে আইসেছি।
চর মাঝারদিয়ার থেকে এসেছেন গৃহবধূ রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পইড়েই সবাই চলে আইসেছি। আইসে তো দেখি রাজশাহী শহর যে সাজাইছে সুন্দর কইরে, খুব ভালো লাইগলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী বুইলবেন তাই শুইনবো।
ঢাকার সাভার থেকে এসে সমাবেশস্থলে সারারাত জেগে ছিলেন আফরোজা আক্তার। শুধু এক নজর প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্যেই তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন। সারারাত জেগেও যেন তার চোখেমুখে ক্লান্তি নেই। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ স্থলে আসার আগে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। জিজ্ঞেস করতেই সহোৎসাহে বললেন, আমার কোনো চাওয়া নেই। শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে একবার দেখা করতে চাই। একটু কথা বলতে চাই, এটাই চাওয়া। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গিয়েছিলাম দেখা করতে। তখন দেখা হয়নি। এ জন্য এবার রাজশাহী চলে এসেছি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। নগরীর পয়েন্টে পয়েন্টে বসে নিরাপত্তা চৌকি। পুলিশ, র্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। শহরের তালাইমাড়ি মোড় থেকে কোট পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ রাখা হয়। এজন্য নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর খাতিরে এসব দুভোর্গকে আমলেই নেননি নগরবাসী। তারা বলছেন, একটু কষ্ট হচ্ছে হোক। প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পাবো, তাঁর কথা শুনতে পাবো এটাইতো বিশাল ব্যাপার।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দিতে পঞ্চগড় থেকে এসেছেন রুয়েট ছাত্রলীগ নেতা রায়হানুল ফেরদৌস রাজ। তিনি বলেন, দুই দিন আগে রাজশাহীতে এসেছি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনা শোনার জন্য। এছাড়া সামনে নির্বাচন। গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে আমাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী কী নির্দেশনা দেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। এত মানুষ দেখে আমি সত্যি অভিভূত। এতদূর থেকে কষ্ট করে যে এত মানুষ এসেছেন এটাই প্রমাণ করে যে জননেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভালোবেসে।
রবিবার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে সকাল ১১ টার মধ্যে কানায় কানায় মানুষে ভরে গেছে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠ। সকাল ৯টার আগে থেকেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠ। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীতে পরিপূর্ণ হয়েছে সভাস্থল।
আরবিসি/২৯ জানুয়ারি/ রোজি