স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার এই আগমনকে ঘিরে রাজশাহী যেন এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে গোটা রাজশাহী। কিছু দূর পরপর শোভা পাচ্ছে সুদৃশ্য রঙিন তোরণ। দেশপ্রধানকে স্বাগত জানাতে পুরো রাজশাহীই সেজেছে নববধূ রূপে।
প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি। জনসভাস্থলে মঞ্চ তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। দলটি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক ‘নৌকা’র আদলে প্রস্তুত করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ। এই মঞ্চেই আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশ ও জাতির উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
আর প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে পুরো রাজশাহীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। শহরের প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে অস্থায়ী চেকপোস্ট। সন্দেহজনক ব্যক্তি ও যানবাহন তল্লাশি করা হচ্ছে। এছাড়া সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে নিরাপত্তা মহড়া।
প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে ঘিরে রাজশাহী মহানগর এলাকায় বিশেষ নিষেধাজ্ঞার জারি করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সদস্য ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরাও মহানগর জুড়ে বাড়তি তৎপরতা চালাচ্ছে। আগে থেকেই থাকা সিসিটিভির মাধ্যমে পুরো নগরীকে কঠোরভাবে নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও ভিভিআইপিদের আগমনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন। ভিভিআইপিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, খাবার ও আবাসন নিয়ে এখন কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাজশাহীতে এসেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিন দিনের সরকারি সফরে তিনি রাজশাহী এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহী আগমন উপলক্ষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তথ্যমন্ত্রী। শনিবারও (২৮ জানুয়ারি) মন্ত্রী রাজশাহীতে অবস্থান করবেন।
আগামী রোববার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগদান করবেন তিনি। এদিন বিকেল ৫টায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছাড়বেন।
আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আগামী রোববার (২৯ জানুয়ারি) রাজশাহী আসছেন। তিনি সকাল ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে রাজশাহীর সারদা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছবেন। এদিন তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাদরাসা মাঠের জনসভায় যোগদান করবেন। বিকেলেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন আগামী ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী সফর করবেন। তিনি আগামীকাল শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ভোর সোয়া ৬টায় রেলপথে রাজশাহী পৌঁছাবেন। রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকালে মন্ত্রী রাজশাহীর সারদায় থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারগণের প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন। দুপুরে মাদরাসা মাঠের জনসভায় যোগ দেবেন। পরদিন সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সড়কপথে রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জ যাবেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৯ জানুয়ারি সকালে একদিনের সফরসূচিতে রাজশাহী আসছেন। এদিন সকালে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন। পরে দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসার ময়দানে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী একযোগে রাজশাহীর ৩৩ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। জনসভা শেষ করে প্রধানমন্ত্রী আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছর পর রাজশাহীতে আসছেন। সারাদেশের মতো রাজশাহীর সব উন্নয়নের অবদান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকেই আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সভা-সমাবেশ ও প্রচার মিছিল করা হয়েছে। সব জায়গাতেই আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। রাজশাহীতে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা হবে। সবার কাছেই জনসভাটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগরী এক উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। কেবল এই মাদরাসা মাঠই নয়, পুরো রাজশাহীই মানুষে ছাপিয়ে যাবে; লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে। এরই মধ্যে জনসভার সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সারা উত্তর বঙ্গের মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছেন জনসভায় আসার জন্য।
তিনি আজ শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে যান। সেখানে নেতাদের নিয়ে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এবারের জনসভা হবে ঐতিহাসিক। রাজশাহীর এই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। এজন্য শুধু নেতাকর্মীই নয়, সারা দেশের মানুষই অপেক্ষা করছেন বলেও উল্লেখ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এই নেতা।
এরআগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর এ ঐতিহাসিক মাদরাসা ময়দানেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা উপস্থিত জনতার কাছে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চেয়েছিলেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারায় ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। এছাড়া ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবার হরিয়ানের বিশাল জনসভায় হাজির হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় রাজশাহীতে এ জনসভার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরবিসি/২৭ জানুয়ারি/ রোজি