আরবিসি ডেস্ক: উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে তাপমাত্রার পারদ নামছেই। সোমবার সকাল ৯টায় এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দুর্ঘটনা এড়াতে দিনেও আলো জ্বেলে চলছে যানবাহন।
গতকাল সকাল ৯টায় সূর্য দেখা গেলেও রোদের প্রখরতা নেই। রাস্তা-ঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। জরুরি কাজ না থাকলে কেউ তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন অসহায়, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। শীত নিবারণে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
দিনাজপুর জেলা সদরের ভ্যানচালক দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে খুব ঠান্ডা পড়ছে। তাও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছি। বাজারে লোকজনের চলাচলও কমে গেছে। কোনও যাত্রী পাচ্ছি না। গত কয়েকদিন ধরে আয়-রোজগার একেবারে কমে গেছে।’ শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। তবুও জীবিকার তাগিদে বাজারে আসতে হচ্ছে। দোকান খুলছি, কিন্তু কোনও ক্রেতা নেই।’
স্কুলছাত্রী শামসুন্নাহার সোনিয়া জানায়, রাস্তায় ভ্যান-রিকশা চলাচল কমে গেছে। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের মথ্যে হেঁটে আসতেও শরীর কাঁপছে। আবিদা তাসনিম স্নেহা নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘সকালে উঠে পানি নাড়তে ইচ্ছে করে না। পানি যেন বরফ হয়ে গেছে, হাতে-পায়ে লাগলেই অবশ হয়ে যাচ্ছে। সকালে বাড়ির কাজই করা যাচ্ছে না।’
দিনমজুর তৈবুর রহমান বলেন, ‘বাড়ি থেকে বের হবো কেমন করে, শীত ঠেকাতে কোনও ভালো কাপড় নেই। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। খড়কুটো জ্বালিয়ে আপাতত শীত নিবারণ করছি। বেলা উঠলে কাজের সন্ধানে বাজারে যাবো।’ তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন জানান, তেঁতুলিয়ায় সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে এবং ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে ‘মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ’ বলে। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নেমে এলে তা মাঝারি আকারের এবং এর নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহে পরিণত হয়। সেই হিসাবে গতকাল পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। রেলপথমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি দেবীগঞ্জ উপজেলায় তিন হাজার কম্বল বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে শীতবস্ত্র দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।’
আরবিসি/০৯ জানুয়ারি/ রোজি